অন্নদাশঙ্কর রায়
ক্যাপিটালিজম হচ্ছে মানুষের সঙ্গে মানুষের এমন একটা সম্বন্ধ যাতে পারস্পরিক সাহায্য নেই, যেমন আমাতে ও আমার পাড়াপড়শীতে। যাতে এক পক্ষের অভাবের সুযোগ নিয়ে অপর পক্ষ তার সঞ্চিত শ্রমকে বঞ্চিত শ্রম সহযোগে উত্তরোত্তর পরিস্ফীত করে। সেই পরিস্ফীতির পশ্চাতে থাকে আইন আদালত ও আইন আদালতের পিছনে থাকে সঙ্গীন বন্দুক। কালক্রমে এক শ্রেনী আরেক শ্রেণীর অন্ন সংস্থানের উপায় করায়ত্ত করে, উৎপাদনের উপায়গুলোর মালিক হয়। ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের কলকাঠি টিপতে টিপতে যুদ্ধ বিগ্রহ বাধায়। অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশগুলি গ্রাস করে। দুনিয়া জুড়ে চলতে থাকে বঞ্চিত শ্রমের ফলাও কারবার, তার মূলে অবশ্য কিয়ত পরিমাণ সঞ্চিত শ্রম। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধ বিষিয়ে যায়। বিপ্লবের দ্বারা সেই সম্বন্ধ যাতে স্বাস্থ্যকর হয় তার জন্যে একদল মানুষ জান কবুল করে .......
........সব রাক্ষসের প্রাণ লুকানো থাকে একটি না একটি কৌটায়। এই রাক্ষসের প্রাণ যে কৌটায় লুকানো তার নাম মিলিটারিজম। ক্যাপিটালিজমের সঙ্গে মিলিটারিজমের সম্বন্ধ এত নিগূঢ় যে দিব্য দৃষ্টি না থাকলে দেখা যায় না। যুদ্ধের আগে, যুদ্ধের সময় ও যুদ্ধের পরে সব প্রচেষ্টাই যুদ্ধ প্রচেষ্টা। কোনোটা প্রকাশ্যভাবে , কোনোটা প্রচ্ছন্ন ভাবে। সব প্রচেষ্টার নাটের গুরু ক্যাপিটালিজম। কিন্তু এমন গোপন তার ক্রিয়া যে যুদ্ধের জন্য সবচেয়ে বেশি লাফায় জনসাধারণ। তাদের মদ্য পিপাসা মেটাতে গিয়ে শুড়িরা বড়লোক হয়ে যায়, তাদের রণপিপাসা মেটাতে গিয়ে কারখানাওয়ালারা । যতদিন না তাদের মদের নেশা ঘোচে ততদিন যেমন শুড়ির লোকসান নেই, তেমনি যতদিন না তাদের যুদ্ধের পিপাসা মেটে ততদিন লোকসান নেই কারখানাওয়ালাদের, ব্যাংকওয়ালাদের ।
তথ্যসূত্রঃ নতুন করে বাঁচা : অন্নদাশঙ্কর রায়, 1952, কলকাতা, পৃষ্ঠা - ৫-৬,৮
তথ্যসংগ্রহ ও সম্পাদনা : রাজীব সিকদার, কলকাতা