রাজীব সিকদার
এঁরা আক্ষরিক অর্থেই শিক্ষক ছিলেন। অনুভব করেছিলেন শিক্ষা হীনের যন্ত্রণা শিক্ষকরা জাগলেন, জাগালেন অগণিত নুতন প্রাণকে। ছড়িয়ে দিয়ে গেলেন মনুষ্যত্বের বীজ। বিদ্যাসাগর যোগালেন মুখের ভাষা, হৃদয়ের সুর, প্রতিষ্ঠা করলেন অসংখ্য বিদ্যালয়। বেণীমাধব দাস জন্ম দিলেন সুভাষ বোসকে। রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টি করে ফেললেন বিশ্ববিদ্যালয়, জন্ম দিলেন অগণিত বিষয়ের, রুখে দাঁড়াতে শেখালেন নরপিশাচদের বিরুদ্ধে। নজরুলের গান ও সুর গোটা জাতির বিবেককে নাড়িয়ে দিয়ে গেলো। তৈরি করে দিয়ে গেলেন একদল সঙ্গীতের ছাত্রকে। ঢাকার ন্যাশনাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলিন বিহারী জন্ম দিলেন অনুশীলন সমিতি, শিক্ষক মাস্টারদার হাত ধরে জন্ম হলো ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি দলের। আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র জোগালেন বিজ্ঞানের জ্ঞান, যুক্তি, প্রযুক্তি। জন্ম দিলেন মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বোসের। হয়ে উঠেছিলেন বিপ্লবী বিজ্ঞানী। শরৎচন্দ্র সৃষ্টি করলেন মানবতার সাহিত্য, হাতে তুলে দিলেন পথের দাবি। তাই, দেখে ব্রিটিশরা আতঙ্কিত। বিপ্লবের বীজ বুনে দিলেন অগণিত তরুণের হৃদয়ে। প্রশান্ত চন্দ্র মহলনাবিশ জন্ম দিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনে পরিসংখ্যান বিদ্যার। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি দেশের পরিকাঠামো ও সার্বিক উন্নয়নের প্রয়োগ করলেন জ্ঞানকে। তৈরি করলেন একদল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র। এই পথেই আমাদের দেশ ও দেশের নৈতিকতা এখনো প্রাণের রস পাই। তাই, আর দেরি কেনো আবারো কি সংকল্প করা যায়না ? আসুন, প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হই মানুষ তৈরি করার। স্মরণ করি বিদ্যাসাগরের সেই প্রাণের কথা " সাত পুরু মাটি উপড়ে ফেলিয়া নুতন মানুষের চাষ করিতে হইবে " । ইতিমধ্যে যুগের অনেক বদল ঘটে গেছে, বদলেছে শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্যে, বঞ্চনা, নির্যাতনের চরিত্র সকল। সাদার পরিবর্তে কালো জোকের দল রক্তহীন ছিবড়া বানিয়ে চলেছে অসহায় দেশবাসীকে । তাই, এর বিরুদ্ধে মাথা তুলবার, শির সোজা করার মানুষ চাই। চাই, বিপ্লব ও বিপ্লবীদের জন্মদাতাদের চর্চা। শিক্ষকরাই পারেন যন্ত্রণা মানব মুক্তির এই চর্চায় সর্বত্র সামিল হতে, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে। তাই, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আগামী কয়েক বছরে একদল ছাত্র তৈরি করতেই হবে যাঁরা কালো জোকেদের বুকে কাঁপন ধরাবে।

