Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

পশ্চিমবঙ্গে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কারা করবে বাজিমাত? [পর্ব-২]

চলতি বছরের ১লা সেপ্টেম্বর এই ভোট হলে কোন দলের ঝুলি কত ভারি হতো?

সাতসকাল নিউজবিশেষ পর্যালোচনা

Disclaimer: This article is a political forecast and opinion-based analysis based on public information available until 14 August 2025. It does not represent any official declaration or confirmed election outcome. Readers are encouraged to treat this as speculative content and cross-verify with official sources as events unfold. | সতর্কীকরণ: এই প্রতিবেদনটি ১৪ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্মিত একটি পূর্বাভাস ও বিশ্লেষণমাত্র। এটি কোনও নিশ্চিত ফলাফল বা সরকারি ঘোষণা নয়। ভবিষ্যতের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই বিশ্লেষণের বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে। পাঠকদের অনুরোধ, বিষয়টি স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করুন। 

 

পশ্চিমবঙ্গ — ভারতীয় রাজনীতির ঐতিহ্যবান ও কার্যত সূক্ষ্ম সমীকরণের রাজ্য। ২০২৬-এর মাঝামাঝি সময়ে বিধানসভা যদি ১লা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতো, তা হলে কাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনীতি ঝাঁকুনি খেত—এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলি, কেন্দ্রীয়-রাজ্য সম্পর্ক, অর্থ-সামাজিক বাস্তবতা, রাজনৈতিক সংগঠন ও জনমতের ধারা—সবকিছু বিবেচনায় আনতে হয়। নিচের বিশ্লেষণে আমি তথ্যভিত্তিক ও সন্তুলিত দৃষ্টিতে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তুলে ধরছি এবং তার ভিত্তিতে সম্ভাব্য আসন-প্রক্ষেপণ দিচ্ছি। যেখানে সম্ভব সাম্প্রতিক খবর ও ফলাফল উদ্ধৃত করা হয়েছে।

 

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট (সংক্ষেপে)

লোকসভা ২০২৪ ফল ও ভোটজনিত গতিবিধি: ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস (AITC) ফের শক্ত অবস্থান দেখিয়েছে — ভোটশতাংশ ও আসন দুটোতেই তারা ভালো করেছে; সমগ্র রাজ্যসারি বিশ্লেষণে তৃণমূলের ভোট ভিত্তি এখনও সুবিশাল। কেন্দ্রীয় নির্বাচন-ফল রাজ্য পর্যায়ে রাজনৈতিক গতিবিধির নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করে।

কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মকাণ্ড ও তদন্তের আলাপ: গত কয়েকবছরে রাজ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থার (ED, CBI) বেশ কিছু অভিযান এবং শিক্ষাবিভাগ/নিয়োগ সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির খবর রাজনৈতিক বাতাস পরিবর্তন করেছে; এগুলো রাজনৈতিক আঘাত সৃষ্টিকারী হলেও জনমতে এর ব্যাখ্যা রাজনীতিবিদরা বিভিন্নভাবে দেন—কেউ কেন্দ্রীয় থাবাকে আক্রমণ বলে দেখেন, কেউ বলেই রাখেন সরকারি দুর্নীতি ধরে ফেলা হয়েছে। এই বিভাজনই ভোটে ধাক্কা বা সমর্থন দুটোই আনতে পারে।

রাজ্য সরকারের জনসেবা উদ্যোগ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সাম্প্রতিক সময়ে ‘দুয়ারে সরকার’-প্রকরণধারা, স্থানীয় ক্যাম্প (Amader Para/Amader Samadhan) ইত্যাদি কর্মসূচি জোরদার করে জনসংযোগ বাড়িয়েছে—এই জাতীয় জনপ্রিয় প্রকল্পগুলি ভোটের পূর্ব মুহূর্তে ইনকামবেন্সির প্রভাব কিছুটা ধোঁয়াটে করতে সক্ষম।

সংগ্রামী রাজনৈতিক ময়দান: উত্তর বঙ্গ এবং কিছু সীমান্তাঞ্চলে বিজেপি এখনও শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে; তদ্রূপ শহুরে ও কিছু মধ্যবঙ্গীয় এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র। পাশাপাশি বাম-কংগ্রেস-ISF ধরনের তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা আঞ্চলিকভাবে বিভাজন ঘটাতে পারে।

 

ভোটচাল ও জনমতের মূল প্রবণতাসমূহ

ইস্যুভিত্তিক ভোট: চাকরি, শিক্ষা ও সরকারি নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ, মুদ্রা-অর্থনীতি ও দমবন্ধকারী মূল্যবৃদ্ধি—এগুলো তরুণ ভোটার ও মধ্যবিত্তের মধ্যে সংবেদনশীল।

পরিসেবা ভিত্তিক ভোট: সরকারি মঞ্চ থেকে সরাসরি পৌঁছে দেয়া ভর্তুকি বা কর্মসূচি (যেমন দুয়ারে সরকার)—মহিলা ও নির্ধারিত সামাজিক শ্রেণির মধ্যে তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতা কাজে লাগায়।

ধর্মীয়/সামাজিক ধারাভাষ্য: কিছু স্থানীয় অঞ্চলে ধর্মীয় বা সমাজভিত্তিক রাজনৈতিক ব্যবধান ভোটকে প্রভাবিত করে; ISF-এর মতো পার্টি কোথাও কোথাও মুসলিম ভোটকে প্রভাবিত করতে পারে।

 

দলভিত্তিক শক্তি-দুর্বলতার সমন্বয় ও কৌশলগত পরিমাপ

তৃণমূল কংগ্রেস (AITC)

শক্তি: শক্ত স্থানীয় সংগঠন, মহিলা ও গ্রামীণ ভোটে দৃঢ় উপস্থিতি, লোকসেবামূলক প্রকল্পের ধারাবাহিকতা।

দুর্বলতা: কেন্দ্রীয় তদন্ত, কিছু শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মুকুটছেঁড়া অভিযোগ জনমতকে নকমাতে পারে; দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা অনুবৃত্তিতে অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি দেখা দিতে পারে।

 

ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)

শক্তি: উত্তর ও সীমান্তবর্তী জেলা এবং শহুরে কিছু কেন্দ্রে শক্তিশালী সংগঠন; কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিনির্ধারণে যোগ্যতা ও আর্থিক/বিপিএম-শক্তির সমর্থন।

দুর্বলতা: বাংলার মাটিতে স্থানীয় নেতৃত্বের ঘাটতি, সাংগঠনিক ভাঙণ ও তৃণমূলের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার মোকাবেলায় কৌশলে সীমাবদ্ধতা। ভোটশতাংশে উন্নতি থাকলেও আসনান্তরে পূর্ণ ক্ষেপণস্থল তৈরি করা কঠিন।

 

বাম-কংগ্রেস-ISF মিশ্রণ

শক্তি: নির্দিষ্ট অঞ্চলে ঐতিহ্যগত কর্মীদের উপস্থিতি; আন্দোলন-মুখী ইস্যুতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিছু গ্রাসফল পুনরুদ্ধার।

দুর্বলতা: একক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শক্ত না হওয়ায় বড় অংশে ভোট বিভক্তি ঘটতে পারে; আর্থিক ও নেতৃত্বগত দুর্বলতা রয়েছে।

 

১লা সেপ্টেম্বর ২০২৬-এ নির্বাচন হলে দলগুলির সম্ভাব্য আসনের হিসেব:

পরবর্তী এক বছরের রাজনৈতিক উত্থান-পতন, নতুন alianс/ বড় কোনো রাজনৈতিক ঘটনা (উদাহরণ: তৎকালীন বড় গোষ্ঠীখণ্ডনের উন্মোচন, কেন্দ্রীয়-বাংলা বিবাদ তীব্র হওয়া) ফলকে প্রভূতভাবে বদলে দিতে পারে। নিচের রেঞ্জ বর্তমান (আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত) তথ্য, ২০২৪ লোকসভা ফল ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া অনুমান।

তৃণমূল কংগ্রেস (AITC): ১৬৫ – ১৯৫ আসন

(দুয়ারে সরকার, স্থানীয় ক্যাম্প ও শক্ত সংগঠন মিলিয়ে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে; তবুও তদন্ত-আচরণ ও অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি পরিস্থিতি কিছু আসনে ক্ষতি করতে পারে)।

ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP): ৭৫ – ১০০ আসন

(উত্তরবঙ্গ, শহর ও কিছু মধ্যবঙ্গীয় কেন্দ্র সুযোগে ধরতে পারে; তবে রাজ্যের সার্বিক জনধারণায় তৃণমূলের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা বড় বাধা)।

 

বাম-কংগ্রেস-ISF জোট / তৃতীয় পক্ষ: ২০ – ৪০ আসন (মিশ্র ফল)

(যদি একক জোট হিসেবে সুসংহতভাবে মাঠে নামতে পারে এবং গ্রামীন ক্ষোভ কাজে লাগাতে পারে, তখন উপরের রেঞ্জের উচ্চাংশ সম্ভব)।

অন্যান্য/স্বতন্ত্র: ০ – ৫ আসন

 

কী ফ্যাক্টর বদলে দিতে পারে ফলাফল?

রাজনৈতিক ঘটনা বা বড় স্ক্যান্ডাল: কেন্দ্রীয় তদন্তের নতুন ভূমিকা বা তৃণমূলের কোনও বড় বাঁশি-লুট আভাস আসলে ভোটে সমীকরণ বদলে যেতে পারে।

সংগঠন ও জোট কৌশল: বাম-কংগ্রেস/ISF-এর মধ্যে সমন্বয় হলে তৃতীয় শক্তি হিসেবে তারা শতকরা ভোট ভাগে প্রভাব ফেলতে সক্ষম।

আর্থিক-সামাজিক সূচক: মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান ও কৃষি-উৎপাদনের বাস্তবতা ভোটারদের আচরণকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

নির্বাচনী পরিবেশ ও ECI-বঙ্গ সম্পর্ক: নির্বাচন কমিশন বনাম রাজ্য প্রশাসনের বিবাদ, ভোটপ্রক্রিয়া-সংক্রান্ত বিতর্ক বা পরিচালনা সংক্রান্ত চাপও জনমত গঠনে সহায়ক বা বিপরীত দুটোই হতে পারে—সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য ও ECI-র মধ্যে টানাপোড়েন প্রকাশ পেয়েছে।

দল

ভোট শতাংশ (আনুমানিক)

আসন সংখ্যা (আনুমানিক)

তৃণমূল কংগ্রেস

৪১% – ৪৪%

৬৫ – ১৯৫

বিজেপি

৩৮% – ৪০%

৭৫ – ১০০

বাম-কংগ্রেস-ISF জোট

১৪% – ১৬%

২০ – ৪০

অন্যান্য/স্বতন্ত্র

২% - ৩%

০ - ৫

১লা সেপ্টেম্বর ২০২৬-এ নির্বাচন হলে — বর্তমান রাজনৈতিক এবং সাম্প্রতিক তথ্যের আলোকে তৃণমূল সুবিধায় থাকবে; কিন্তু বিজেপি উত্তর ও দক্ষিণের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে উল্লেখযোগ্য আসন লাভ করতে পারে; তৃতীয় পক্ষ (বাম-কংগ্রেস-ISF) আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মোটফলকে প্রভাবিত করবে। উপরোক্ত রেঞ্জগুলো রাজ্যের বহুসময় ধরে চলা রাজনৈতিক গতিধারা ও সাম্প্রতিক নির্বাচনী ফলাফল—বিশেষত ২০২৪ লোকসভার ভিত্তিতে অনুমিত হয়েছে।

এখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী তৃণমূল এগিয়ে, কিন্তু বিজেপি কিছু আসনে ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে এবং বাম-কংগ্রেস-ISF কয়েকটি অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে। 

(এই বিশ্লেষণটি ১৪ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি। ভবিষ্যতের ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী চূড়ান্ত ফলাফল ভিন্ন হতে পারে।) ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: