পাঠক মিত্র
বঙ্গবন্ধুর মূর্তি আবার ভাঙা হল । তাঁর মৃত্যুর অর্ধ শতবর্ষের প্রথম দিনেই তাঁর মূর্তি ভেঙে আওয়ামীলীগের প্রতি, হাসিনার প্রতি ঘৃণা প্রশমনে লিপ্ত হল কিছু মানুষ । বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর অর্ধ শতবর্ষে তাঁর প্রতি কোনরকম শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা যাবে না বলে চলমান কেয়ার টেকার সরকার নির্দেশ জারি করেছিল । এই নির্দেশকে মূর্তি ভাঙার কারিগররা অমান্য করেনি । বরং বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন যাতে না করতে পারে তাঁর মূর্তি ভেঙে সে ব্যবস্থাই করে সরকারি নির্দেশকে আরো শক্তিশালী করেছে । এই পরিবেশের মধ্যেই যাঁরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার আইনি ব্যবস্থা নেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন যাঁরা, তাঁরা 'সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ' তৈরি করতে সচেষ্ট বলে সরকারের প্রতিনিধিদের কেউ বলেছেন । তাহলে যারা বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙছে তারা কি করতে চাইছে ?
বঙ্গবন্ধুর মূর্তি আবার ভাঙা হল । তাঁর মৃত্যুর অর্ধ শতবর্ষের প্রথম দিনেই তাঁর মূর্তি ভেঙে আওয়ামীলীগের প্রতি, হাসিনার প্রতি ঘৃণা প্রশমনে লিপ্ত হল কিছু মানুষ । বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর অর্ধ শতবর্ষে তাঁর প্রতি কোনরকম শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা যাবে না বলে চলমান কেয়ার টেকার সরকার নির্দেশ জারি করেছিল । এই নির্দেশকে মূর্তি ভাঙার কারিগররা অমান্য করেনি । বরং বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন যাতে না করতে পারে তাঁর মূর্তি ভেঙে সে ব্যবস্থাই করে সরকারি নির্দেশকে আরো শক্তিশালী করেছে । এই পরিবেশের মধ্যেই যাঁরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার আইনি ব্যবস্থা নেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন যাঁরা, তাঁরা 'সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ' তৈরি করতে সচেষ্ট বলে সরকারের প্রতিনিধিদের কেউ বলেছেন । তাহলে যারা বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙছে তারা কি করতে চাইছে ?
হাসিনার ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদে বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরবর্তী সময় দেশবাসীর কাছে দেশের সাংস্কৃতিক মানকে উন্নত করার কোন প্রচেষ্টা করতে পেরেছে কি কেয়ার টেকার সরকার ? কেবল হাসিনা বিরোধী বা আওয়ামী লীগ বিরোধী হলেই কি 'সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ'-এর বিরুদ্ধে লড়াই।
বাংলাদেশের এই ধ্বংসকারী মানুষজন শুধু বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বকে মুছে ফেলতে চাইছে না । তাঁরা সাংস্কৃতিক, শিল্প ও সাহিত্য জগতের সমস্ত ব্যক্তিত্বের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে সচেষ্ট হচ্ছে না কি ? এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহত্ত্বকে আক্রমণ করতে ছাড়ে নি এই ধ্বংসকারী মানুষজন ।
হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের যে সমস্ত মানুষের হাতে ধ্বংসলীলা সংগঠিত হয়েছে তাঁরা দেশের কোন সাংস্কৃতিক মানকে তুলে ধরতে চেয়েছে কিংবা এখনো চাইছে ? ইউনুস সরকার তার দায় হাসিনা সরকারের উপর চাপিয়েছেন ।
ইউনুস রাজনীতির লোক নন । তাঁর পক্ষে যদি একই পথ অবলম্বন করতে হয়, তিনি কি তা ইচ্ছাকৃতভাবে করছেন, নাকি নিরুপায় হয়ে তাঁকে তা করতে হচ্ছে ? শান্তির কান্ডারী (নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির হিসেবে) হয়ে নিজের দেশের মানুষের কাছে শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে তিনি ব্যর্থ কেন হচ্ছেন? তাঁর এই ব্যর্থতায় বাংলাদেশের ইতিহাস পাল্টে ফেলার পরিকল্পনা চলছে, সংবিধান পাল্টে ফেলার পরিকল্পনা চলছে না কি? যদিও সে-দাবিও উঠেছে । এমনকি সেই দাবিতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহত্বকে লঘু করার প্রয়াস চলছে জোর কদমে । ইতিহাস পাল্টে দিলে, সংবিধান পাল্টে দিলে হিংসা থামানো যাবে কি ? মূর্তি ভাঙার ইতিহাস দিয়ে, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস মুছে দিয়ে 'সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ' মুছে দিতে পারবে কি ?
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ কট্টরপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সে কথা কি বর্তমান সরকারপক্ষ অস্বীকার করতে পারে কি ? একটা কথা সকলকে মনে রাখতে হবে কোনো কট্টরপন্থী, মৌলবাদ কি 'সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ' রুখতে তাঁরা সেই উন্নত আদর্শের রাজনৈতিক চর্চা করে ? তাঁরা কি দেশের সমস্যা সমাধান করতে পারে ? কোন দেশে তা করতে পেরেছে কি ? যে কোনো মৌলবাদে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজ, অর্থনীতি মজবুত হয় না, এর উদাহরণ না দিলেও তা কি পরিষ্কার নয় ? দেশের ইতিহাস বিশেষত স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে দিতে সচেষ্ট যাঁরা, তাঁরা কি দেশের উন্নত সাংস্কৃতিক গড়ার লক্ষ্য নিয়ে করছে ? হাসিনা ফ্যাসিবাদী মানেই কি বঙ্গবন্ধু ফ্যাসিবাদী ? এই ধারণা তৈরি যারা করেছে তারা কিন্তু দেশের জন্য আরো ভয়ংকর। দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্বকে মুছে দেওয়ার এই ইতিহাস কিন্তু আর এক 'সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ'-এর জন্ম দিচ্ছে যা বাংলাদেশকে গ্রাস করতে যাচ্ছে । তবে এই 'সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ' শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, নতুন রূপে নতুন রঙে দেশে দেশে এই ফ্যাসিবাদের জন্ম হচ্ছে । এই জন্ম যখন সরকারি ক্ষমতার সাহচর্যে কিংবা উদাসীনতায় হয়, তখন মানবিক সভ্যতার অন্ধকারটাই প্রকাশ পায় । উন্নত আদর্শিক রাজনৈতিক পথের চর্চাই সেই অন্ধকারকে প্রতিহত করতে পারে । যাঁরা আজ সেই চর্চা করতে পারছে বলে মনে করেন তাঁদের কাছে লড়াইটা কিন্তু আজ অনেক কঠিন । বাংলাদেশে তাঁদের সেই কঠিন লড়াইয়ে মানুষকে কতটা সাথে পাবে তা সময় বলবে ।