Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

আনন্দময় অবতারণা: জন্মাষ্টমীর আলোয় কৃষ্ণচেতনা


যোগমায়া আচার্য

 

ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি—যেদিন মথুরার কারাগারে, অন্ধকার রাতের নীরবতায়, দুষ্টের দমন ও সজ্জনের রক্ষার্থে অবতীর্ণ হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। জন্মাষ্টমী শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি প্রেম, ন্যায়, সাহস ও সত্যের মহিমা স্মরণের দিন। কৃষ্ণের জন্মের কাহিনী যেন এক মহাকাব্য—অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, অটুট ভক্তি ও অবিচল ন্যায়ের প্রতীক।

কংসের অত্যাচার আর মথুরার মানুষের অসহায় অবস্থার মধ্যেই কৃষ্ণের জন্ম, যেন ইঙ্গিত দেয়—অন্ধকার যত গভীর হয়, আলোর আগমন ততই নিশ্চিত। তাঁর শৈশবের প্রতিটি মুহূর্ত ভক্তের হৃদয়ে আনন্দ ও বিস্ময়ের সঞ্চার করে—গোপাল রূপে মাখনচুরি, বাঁশির সুরে গোপীদের মোহিত করা, আর শক্তি প্রদর্শনে কালীয় নাগ দমন, সবই কৃষ্ণকে মানব-ঈশ্বরের অনন্য রূপে তুলে ধরে।

জন্মাষ্টমীর রাতে উপবাস, ভজন, গীত ও ধ্যানের মাধ্যমে ভক্তরা নিজেদের অন্তরে কৃষ্ণচেতনার আলো জ্বালিয়ে তোলেন। এই উপবাস কেবল শরীরের জন্য নয়, বরং মনকে শুদ্ধ করে আত্মাকে প্রস্তুত করে সেই দিভ্য লীলা অনুভবের জন্য। মধ্যরাতে কৃষ্ণজন্মের মাহাত্ম্য স্মরণ করে মন্দিরে ঘণ্টা বাজে, শঙ্খধ্বনি শোনা যায়, আর ভক্তদের চোখে আনন্দাশ্রুর ঢেউ খেলে যায়।

শ্রীকৃষ্ণের বাণী, বিশেষত ভাগবদ্ গীতায় তাঁর উপদেশ, আজও জীবনের দিশারী। কর্মে স্থিত থেকে ফলের আসক্তি ত্যাগ করার শিক্ষা, ধর্ম রক্ষার অঙ্গীকার, এবং সকল জীবের প্রতি সমবেদনা—এই সবই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শান্তি ও স্থিতি আনে। জন্মাষ্টমী তাই শুধু পূজার্চনার দিন নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক জাগরণের সুযোগ।

এই দিনে বহু ভক্ত শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষ্ণের লীলা পুনরুজ্জীবিত করেন—রাসলীলা, দইহাণ্ডি, গোপাল সেজে শিশুদের আনন্দোৎসব, সব মিলিয়ে জন্মাষ্টমী হয়ে ওঠে ভক্তি ও আনন্দের মিলনমেলা। ঘরে ঘরে সজ্জিত ঝুলন, আলোকসজ্জা ও কৃষ্ণ-রাধার মূর্তি ভক্তির আবেশে ভরে ওঠে।

আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা ও কোলাহলের মধ্যে জন্মাষ্টমী আমাদের থামতে শেখায়, অন্তরে এক গভীর শান্তি ও প্রেমের সঞ্চার করে। কৃষ্ণের জন্মকাহিনী মনে করিয়ে দেয়—অন্যায় যতই প্রবল হোক, ধর্ম ও ন্যায় শেষ পর্যন্ত জয়ী হবেই। তাঁর বাঁশির সুর যেন প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে প্রেম, করুণা ও সৌন্দর্যের সঞ্চার ঘটায়।

জন্মাষ্টমী তাই শুধুমাত্র অতীতের স্মৃতি নয়, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণা। কৃষ্ণের জীবন ও শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রেমই সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি, আর সত্যের পথে অবিচল থাকাই জীবনের চূড়ান্ত ধর্ম। এই পবিত্র তিথিতে, আমরা যেন নিজের মধ্যে সেই কৃষ্ণচেতনা জাগিয়ে তুলি, যা প্রতিটি হৃদয়কে অমলিন আলোয় ভরিয়ে দেয়।

 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon