যোগমায়া আচার্য
মুখে না বলেও মনের কথা বলা যায়—এখন আর সেটা কল্পনা নয়, বাস্তব। কারণ আমাদের হাতের মুঠোয় এসেছে এক আশ্চর্য ভাষা, যার নাম ইমোজি। প্রতিটি মুখভঙ্গি, প্রতিটি অনুভূতির একটি করে ডিজিটাল রূপ; কখনও একফোঁটা হাসি 😊, কখনও চোখের জল 😢, কখনও ভালোবাসার প্রকাশ ❤️। এই রঙিন প্রতীকগুলির সম্মানেই প্রতি বছর ১৭ জুলাই পালিত হয় World Emoji Day—একটি দিন, যা আমাদের অনুভবকে নতুনভাবে প্রকাশ করার স্বাধীনতা উদযাপন করে।
ইমোজির ইতিহাস খুব দীর্ঘ না হলেও, এর প্রভাব সাংঘাতিক। ১৯৯৯ সালে জাপানের শিল্পী শিগেতাকা কুরিতার হাতে প্রথম যে ইমোজির জন্ম, তা ছিল কেবলমাত্র ১৭৬টি চিহ্নে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আজকের দিনে এসে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে হাজারেরও বেশি ইমোজি—বিভিন্ন আবেগ, সংস্কৃতি, খাবার, পশুপাখি, বস্তু এমনকি লিঙ্গ ও জাতিগত পরিচয়কেও প্রতিনিধিত্ব করে এই ছোট্ট প্রতীকগুলো।
পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কারা করবে বাজিমাত? [পর্ব-১]
ইমোজি মূলত প্রযুক্তিনির্ভর যুগের মানুষের অনুভব প্রকাশের সহজ মাধ্যম। লেখার ভাষায় অনেক সময় যা বোঝানো কঠিন, ইমোজির একটিমাত্র চিহ্নেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কাউকে শুধুই “ঠিক আছি” বলেন, সেটি শুষ্ক শোনাতে পারে। কিন্তু তার পাশে যদি একটা 😊 জুড়ে দেন, তাহলে তা হয়ে ওঠে উষ্ণ ও মানবিক। এই ছোট্ট প্রতীকের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে এক অদৃশ্য কিন্তু দৃঢ় সংযোগ।
বিশ্বায়নের যুগে ভাষা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু ইমোজি সেই বাধাকে ভেঙে দিয়েছে। ভাষা না বুঝলেও একটি 😍 বা 🤝 বোঝাতে পারে ভালোবাসা ও সমঝোতার কথা। তাই ইমোজিকে বলা যায় ডিজিটাল যুগের গ্লোবাল ভাষা—যা সবাই বোঝে, সবাই অনুভব করে।
তবে ইমোজির ক্ষমতা শুধু ব্যক্তিগত কথোপকথনে সীমাবদ্ধ নয়। এখন ব্যবসায়িক জগৎ, বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন, এমনকি রাজনৈতিক বার্তাতেও ব্যবহার হচ্ছে ইমোজি। কারণ এটিই এমন এক যোগাযোগের রূপ, যা একদিকে হালকা, অন্যদিকে প্রভাবশালী।
তবে প্রশ্ন ওঠে, এই ইমোজি কি শব্দের গুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছে? না, বরং বলা যায়, এটি শব্দের এক পরিপূরক ভাষা তৈরি করেছে। ইমোজি আমাদের সাহিত্যের বিকল্প নয়, কিন্তু এটি আমাদের দৈনন্দিন কথোপকথনে উষ্ণতা ও ব্যক্তিত্ব যুক্ত করেছে।
World Emoji Day আমাদের মনে করায়, অনুভবের কোনো বাধা নেই, ভাষা হতে পারে ছবিও। তাই আজকের দিনে শুধু একটি ইমোজি পাঠিয়েই কারও মুখে হাসি ফোটানো যায়। এই ছোট্ট ডিজিটাল প্রতীকগুলো যেন আমাদের অন্তরের দরজা খুলে দেয় এক নতুন মানবিক যোগাযোগের দিকে।
আজকের দিনে আমরা শিখি—অভিব্যক্তি শুধু শব্দে নয়, প্রতীকে প্রকাশেই আরও প্রাঞ্জল হয়ে উঠতে পারে। ইমোজিই সেই আধুনিক মানবিক ভাষা—নীরব কিন্তু বলিষ্ঠ, ছোট্ট কিন্তু প্রাণবন্ত। 💬🌍😊