চলতি বছরের ১লা আগস্ট এই ভোট হলে কোন দলের ঝুলি কত ভারি হতো?
‘সাতসকাল নিউজ’ বিশেষ পর্যালোচনা
Disclaimer: This article is a political forecast and opinion-based analysis based on public information available until July 2025. It does not represent any official declaration or confirmed election outcome. Readers are encouraged to treat this as speculative content and cross-verify with official sources as events unfold. | সতর্কীকরণ: এই প্রতিবেদনটি জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্মিত একটি পূর্বাভাস ও বিশ্লেষণমাত্র। এটি কোনও নিশ্চিত ফলাফল বা সরকারি ঘোষণা নয়। ভবিষ্যতের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই বিশ্লেষণের বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে। পাঠকদের অনুরোধ, বিষয়টি স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করুন।
২০২৬-এর মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিমবঙ্গ আবারও বিধানসভা নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চলেছে। যদি ১লা আগস্ট ২০২৫-এ এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো, তবে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, সামাজিক মনোভাব, অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি এবং দলীয় সংগঠন ও ময়দানি প্রস্তুতির নিরিখে কোন দল কতগুলি আসন পেতে পারত—এই প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার বিষয়। এই নিবন্ধে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ করা হলো।
বর্তমান বিধানসভা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক চিত্র
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস (AITC) ২১৩টি আসন পেয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। বিজেপি ৭৭টি আসন জিতলেও সংগঠন ও অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে পরবর্তী সময় অনেকটাই পেছনে পড়ে যায়। বাম, কংগ্রেস এবং ISF-এর সংযুক্ত মোর্চা একটি আসনও পায়নি।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও তৃণমূল এখনও রাজ্য রাজনীতিতে প্রধান শক্তি হিসেবে রয়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন নতুন সমীকরণ তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
দলভিত্তিক বিশ্লেষণ
তৃণমূল কংগ্রেস (AITC)
রাজনৈতিক অবস্থান: তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতায় টানা তৃতীয় মেয়াদে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা এখনও অনেকটাই অটুট। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প—লক্ষ্মীর ভান্ডার, দুয়ারে সরকার, খাদ্যসাথী, ছাত্র ঋণ প্রকল্প—জনমানসে প্রভাব ফেলেছে।
সামাজিক প্রভাব: গ্রামীণ ও মহিলাদের মধ্যে তৃণমূলের প্রভাব দৃঢ়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এখনও তৃণমূলের বড় ভোট ব্যাংক।
দুর্বলতা: কয়লা, গরু পাচার কাণ্ড, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, SSC কেলেঙ্কারি ইত্যাদি বিষয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত এবং কিছু শীর্ষ নেতার গ্রেপ্তার জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে।
তাছাড়া দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে কিছু এলাকায় অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি লক্ষণীয়।
আসন প্রক্ষেপণ (১ আগস্ট নির্বাচন হলে): ১৮৫-২০০ আসন (দক্ষ সংগঠন ও সরকারি প্রকল্পে জনসমর্থনের জোরে) পেতে পারে।
ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)
রাজনৈতিক অবস্থান: ২০২১-এর পর থেকে বিজেপি সংগঠনে চরম বিভাজনের শিকার হলেও ২০২৪ লোকসভায় কিছুটা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। হিন্দি ভাষাভাষী অঞ্চলে এবং উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের কিছু এলাকায় বিজেপি এখনো শক্তিশালী।
সামাজিক প্রভাব: হিন্দু ভোটারদের একাংশ এখনো বিজেপির প্রতি অনুগত। এনআরসি, সিএএ-র মতো ইস্যুতে জনমানসে বিভাজন সৃষ্টি করে তারা কিছু সমর্থন পেয়েছে।
দুর্বলতা: রাজ্যের সাংগঠনিক দুর্বলতা, স্থানীয় নেতৃত্বের অভাব, এবং বাংলার মাটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার বিপরীতে মোদি-মুখ্য নির্বাচনী কৌশল খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না।
আসন প্রক্ষেপণ: ৬৫-৮০ আসন (লোকসভা ফলাফলের ধারাবাহিকতা থাকলে) পাওয়ার সম্ভাবনা।
বাম-কংগ্রেস-ISF জোট (INDIA Bloc)
রাজনৈতিক অবস্থান: বাম এবং কংগ্রেস একসময়ে বাংলার প্রধান দুই দল হলেও এখন তারা প্রায় অস্তিত্ব সংকটে। তবে ২০২৩-২৪ সালে ছাত্র আন্দোলন, বেকারত্ব, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কিছুটা সামাজিক ভিত্তি ফিরিয়েছে। ISF এর পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির প্রভাবও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর চব্বিশ পরগনার মুসলিম অঞ্চলে রয়েছে।
দুর্বলতা: একটি সুসংবদ্ধ বিকল্প ফ্রন্ট হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যুব নেতৃত্বের ঘাটতি এবং আর্থিক সংকটও তাদের এগোতে বাধা দিচ্ছে।
আসন প্রক্ষেপণ: ১০-২০ আসন (নির্বাচনপূর্ব জোট কার্যকর হলে) পেতে পারে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
১. যুব ভোট: যুব সম্প্রদায়ের বড় অংশ কর্মসংস্থানের ঘাটতি, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তারা কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রতি অনুগত নয়, বরং ইস্যুভিত্তিক ভোট দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
২. মহিলা ভোট: লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী ইত্যাদি প্রকল্প মহিলাদের মধ্যে তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। মহিলা ভোট ব্যাংক এই নির্বাচনে অন্যতম নির্ণায়ক হতে পারে।
৩. কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত: বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের অংশ না পাওয়া, কেন্দ্রীয় অনুদানের বণ্টন, রাজ্যের প্রাপ্য বকেয়া অর্থ ইত্যাদি বিষয়ে তৃণমূল সরকার কেন্দ্রকে দায়ী করে জনমত গড়েছে। বিজেপি যদিও তা অস্বীকার করে নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়েছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ধারণা তীব্র।
৪. সংখ্যালঘু ভোট: তৃণমূলের প্রতি এদের আস্থা এখনও যথেষ্ট, যদিও ISF কিছু জায়গায় এই ভোটে ভাগ বসাতে পারে।
আসনভিত্তিক অঞ্চলবিশেষ বিশ্লেষণ:
দক্ষিণবঙ্গ (কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া): তৃণমূলের আধিপত্য অটুট। এখানে তারা ৭০% আসনে এগিয়ে থাকবে।
উত্তরবঙ্গ (দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা): বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। তবে মালদা ও মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস কিছুটা সুবিধা পেতে পারে। তৃণমূল উত্তর দিনাজপুর ও কিছু সংখ্যালঘু অঞ্চলে ভালো করবে।
পশ্চিম বর্ধমান ও পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর: এলাকাভিত্তিক দ্বিধাবিভক্ত পরিস্থিতি। বিজেপি এবং তৃণমূল সমান প্রতিযোগিতায়।
দল |
ভোট শতাংশ (আনুমানিক) |
আসন সংখ্যা (আনুমানিক) |
তৃণমূল কংগ্রেস |
৪৩% - ৪৬% |
১৮৫ - ২০০ |
বিজেপি |
৩৬% - ৩৯% |
৬৫ - ৮০ |
বাম-কংগ্রেস-ISF জোট |
১৩% - ১৬% |
১০ - ২০ |
অন্যান্য/স্বতন্ত্র |
২% - ৩% |
০ - ৫ |
১লা আগস্টে যদি বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেসই সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে থাকবে, যদিও আগের মতো বিপুল ব্যবধানে নয়। বিজেপি বিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে টিকে থাকবে, তবে সরকারের পরিবর্তনের সম্ভাবনা এখনও ক্ষীণ। বাম-কংগ্রেস জোট কিছুটা জমি ফিরে পেতে পারে যদি তারা সমন্বিত কৌশল নেয়।
তবে মনে রাখতে হবে, রাজনীতির ময়দান অত্যন্ত পরিবর্তনশীল। আগামী এক বছরে জনমত, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নেতৃত্বের ভূমিকা নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারে।
(এই বিশ্লেষণটি জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি। ভবিষ্যতের ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী চূড়ান্ত ফলাফল ভিন্ন হতে পারে।)