Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

স্বাধীনতার ইতিহাসে RSS !

পাঠক মিত্র

ঊনআশি বর্ষ পদার্পণে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশ গঠনে RSS র কৃতিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন । দেশ গঠনে স্বাধীনতার ইতিহাসে যে-RSS কোন ভূমিকা পালন করেনি, সে ইতিহাস তিনি জানেন না তা কি বলা যায় ? অথচ স্বাধীনতা দিবসে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো তাঁর অনিচ্ছাকৃত তা বলা যায় না । তাঁরা দেশপ্রেমের যে আবহাওয়া তুলতে চেয়েছে তা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভাবনার পরিপন্থী শুধু নয়, তাঁরা ব্রিটিশের বিরোধিতা না করে সহযোগিতার কথা বলেছেন । তাঁদের ভাবনার এই দেশপ্রেমের গুলিতে গান্ধীজীকে খুন হতে হয়েছিল ।
 গান্ধীজীকে মরতে হল নাথুরাম গডসে নামে এক হিন্দুর হাতে যা তদানীন্তন সরকারি সংবাদ থেকে বল্লভভাই প্যাটেলসহ সকলেই বলেছেন । যার হাতে গান্ধীজীর মৃত্যু হল তাকেও দেশপ্রেমিক বলে এই হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আজ মনে করে । তার স্মরণে কোথাও তারই নামাঙ্কিত মন্দির গড়েছে, আবার কোথাও গড়ে উঠেছে লাইব্রেরি ।  
তাহলে 'দেশপ্রেম' নিয়ে আর এস এস র পূর্বসূরিরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেশপ্রেমিক হিসেবে যে চোখে দেখতে চেয়েছেন সেখানে গান্ধীজীর যে স্থান ছিল না তা বলা যায় । তাঁদের চোখে দেশভক্ত বা দেশপ্রেমিক কারা ছিলেন । তাঁরা প্রতিটি হিন্দুকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন । তবে তাঁদের এই জাতীয়তাবোধে দেশভক্ত কারা তা বলেছেন তদানীন্তন সঙ্ঘের গুরুজি গোলওয়ালকর তাঁর 'বাঞ্চ অব থট্স'-এ , 'ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ এবং সার্বজনীন বিপদের তত্ত্ব থেকে আমাদের জাতিত্বের ধারণা তৈরি হয়েছে । এর ফলে আমাদের প্রকৃত হিন্দু জাতিতত্বের সদর্থক অনুপ্রেরণা থেকে বঞ্চিত হয়েছি । স্বাধীনতা আন্দোলনকে কার্যত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে পর্যবসিত করা হয়েছে , ... ব্রিটিশ বিরোধিতার সঙ্গে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদকে সমার্থক করে দেখা হয়েছে । আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, তার নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ মানুষের ওপরে এই প্রতিক্রিয়াশীল মতের প্রভাব সর্বনাশা হয়েছে ।...তারাই একমাত্র জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক, যারা তাদের অন্তরে হিন্দু জাতির গৌরব পোষণ করে এবং সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করে । বাকি যারা দেশপ্রেম জাহির করে হিন্দুজাতির স্বার্থহানি করছে তারা বিশ্বাসঘাতক ও দেশের শত্রু । ' গুরুজি আরো বলেছেন, 'যারা বলেছিল হিন্দু-মুসলমান ঐক্য ছাড়া স্বরাজ সম্ভব নয়, তারা আমাদের সমাজের সাথে সব থেকে বেশি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল ।' গান্ধীজী বলেছিলেন যে হিন্দু-মুসলমান ঐক্য ছাড়া স্বরাজ সম্ভব নয় । তাহলে গুরুজির কথা থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে সঙ্ঘ কতটা স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে আর কতটা গান্ধীজীর পক্ষে । এখন আবার গান্ধীজীর হত্যাকারীকে আজকে দেশপ্রেমিক হিসেবে দেখছেন তাঁদেরই কোনো না কোনো মানুষজন । তাহলে গান্ধীজী র হত্যার সমর্থনে তাঁদের ইতিহাস না থাকলে হত্যাকারী দেশপ্রেমিক হয়ে উঠতে পারে না ।
যদিও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গান্ধী হত্যা সম্পর্কে আর এস এস কোনোভাবেই দোষী নয় বলে তার প্রমাণ মাননীয় আদালতে হয়েছে । এমনকি গান্ধী হত্যার জন্য কোনো প্ররোচনামূলক বক্তব্যও সঙ্ঘ তখন করেনি । তবে গান্ধী হত্যার দু'মাস আগে গোলওয়ালকর এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ' গান্ধী এদেশে মুসলমানদের রাখতে চেয়েছিলেন কারণ তাহলে কংগ্রেস মুসলমানদের ভোট পেয়ে জিততে পারে ।কিন্তু ভোটের সময় আসা পর্যন্ত এ দেশে একজনও মুসলমান পড়ে থাকবে না । যদি তাদের জোর করে এখানে রাখা হয়, তার দায়িত্ব সরকারের । হিন্দু সমাজের কোনো দায় নেই । গান্ধী আর এস এস কে আর ভুল পথে বিভ্রান্ত করতে পারবে না ।' এই বক্তব্যের শেষে আরো বলেন,' এরকম লোকেদের চুপ করানোর অনেক উপায় আমাদের আছে । কিন্তু এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া, যার দ্বারা হিন্দু সমাজের ক্ষতি হতে পারে, আমাদের ঐতিহ্যের মধ্যে পড়েনা । কিন্তু আমাদের যদি জোর করা হয় আমরা সেই পথ নিতে পিছপা হব না ।' তারপর গান্ধী নিহত হয়েছিলেন । আর হত্যাকারী আর এস এস সদস্য-যে নয় তার প্রমাণ দিয়েছেন । কিন্তু গান্ধী হত্যা মামলায় হত্যাকারী নাথুরামের ভাই গোপাল গডসে যাঁর নাম প্রাথমিকভাবে জড়িয়েছিল, তাঁর এক বক্তব্য এখানে বললে আরো পরিষ্কার হবে । তিনি বলেন, ' নাথুরাম, দত্তাত্রেয়, আমি ও গোবিন্দ । আমরা সব ভাইয়েরাই আর এস এস র সদস্য ছিলাম । আমরা নিজেদের বাড়িতে যত না বড় হয়েছি তার থেকে বেশি পালিত হয়েছি আর এস এস শাখায় । আর এস এস আমাদের কাছে পরিবারের মতন ছিল । নাথুরাম বৌদ্ধিক কার্যবহ ছিল । ও জবানবন্দিতে বলেছিল ঠিকই যে ও আর এস এস ছেড়ে দিয়েছিল । কিন্তু তার কারণ এটাই যে গান্ধী হত্যার পরে আর এস এস ও গোলওয়ালকর অনেক সমস্যায় পড়েছিলেন । এর অর্থ এই নয় যে ও সত্যি সত্যি আর এস এস ছেড়েছিল ।'
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বি জে পি ছিল না । ছিল হিন্দু মহাসভা ও আার এস এস। 1929 সালে কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজের প্রস্তাব মতে 1930 সালের 26 জানুয়ারি সঙ্ঘ পতাকা উত্তোলনের কর্মসূচি নিয়েছিল এবং সঙ্ঘপ্রধান হেড়গেওয়ার ও তাঁর আর এস এস স্বেচ্ছেসেবকরা গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন । যোগ দিয়েছিলেন ঠিকই তবে এই আন্দোলনে যোগ দেওয়া নিয়ে তিনি ঠিক কি বলেছিলেন , সে কথাটাও জানা দরকার । তিনি বলেছিলেন, 'সঙ্ঘের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যেন সত্যাগ্রহে কোনো মতেই অংশগ্রহণ না করে । তাঁরা ব্যক্তিগত ইচ্ছায় যেতে পারে, কিন্তু সঙ্ঘের নাম যেন সত্যাগ্রহের সাথে না জড়ায় ।' এই কথা বলার পর সরসঙ্ঘচালকের পদ থেকে নিজে ইস্তফা দিয়ে নিজে যোগ দিয়েছিলেন সত্যাগ্রহে । তাহলে হেড়গেওয়ারের সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগদানের জন্য আর এস এস নিয়ে যে কথা বলেছেন তার উদ্দেশ্য যে অন্য ছিল তা পরিষ্কার । যদিও 1930 সাল পর্যন্ত সঙ্ঘকে প্রথমে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত গড়ে তুলতে তিনি ঘোষণা করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের রাজনীতিতে কোনোমতেই সঙ্ঘ অংশগ্রহণ করবে না । দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে আর এস এস নেতা গোলওয়ালকার কি বলেছেন। তিনি বলেছেন,' ব্রিটিশ বিরোধীতাকে ভাবা হচ্ছে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের সমার্থক। এই প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সমগ্র স্বাধীনতা আন্দোলন, তার নেতৃবর্গ ও সাধারণ মানুষের উপর বিনাশকারী প্রভাব ফেলেছিল।' অর্থাৎ ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন আর এস এস-এর কাছে একটি প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন। 
এমনকি আজাদ হিন্দ বাহিনী যখন লড়ছে, বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী তদানীন্তন আর এস এস প্রধান হেডগেওয়ারের কাছে অনুরোধ করেন ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী অভ্যুত্থানে নেতাজীকে সংঘ যেন সাহায্য করে। কিন্তু হেডগেওয়ার নেতাজীকে সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদকে সহায়তা করার জন্য বলেন,'বঙ্গদেশকে রক্ষা করিবার জন্য একটা গৃহ-বাহিনী গঠনের অধিকার আমাদের দেওয়া হউক। ' অর্থাত্ হিন্দু মহাসভার সমর্থন ব্রিটিশকে, নেতাজীকে নয়। ৪২ এর আন্দোলন সম্পর্কে শ্যামাপ্রসাদজী বলেন, ' আমি মনে করি না, গত তিন মাসের মধ্যে যেসব অর্থহীন উচ্ছৃঙ্খলতা ও নাশকতামূলক কাজ করা হয়েছে, তার দ্বারা আমাদের দেশের স্বাধীনতা লাভ হবে। ' 
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করেনি, অথচ সেই আন্দোলন তাঁদের কাছে প্রতিক্রিয়াশীল । স্বাধীনতা দিবসে দেশ গঠনে এমন সংগঠনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচার স্বাধীনতা সংগ্রামকে অপমান করলেন । স্বাধীনতা দিবসে হয়তো তিনি স্বাধীনতার নতুন ও মিথ্যা ইতিহাস রচনার পূর্বাভাস দিলেন । 


ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: