Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

হিরোশিমা: মানবতার বিবেকের সূচনাবিন্দু


যোগমায়া আচার্য

 

৬ আগস্ট, ১৯৪৫—মানব ইতিহাসে এক কালো দিন, যেদিন হিরোশিমা শহর পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে, আর সভ্যতা মুখোমুখি হয়েছিল নিজেরই নির্মিত ভয়াবহ অস্ত্রের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘লিটল বয়’ নামক পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল লক্ষাধিক জীবন, শুরু হয়েছিল দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও মানসিক দুর্ভোগের এক অধ্যায়।

হিরোশিমা শহর ছিল একটি শান্তিপূর্ণ নগরী, যেখানে জীবন ছিল ছন্দোময়। কিন্তু যুদ্ধের নির্মম রাজনীতি সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। এক নিমিষে ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, ধর্মীয় স্থান এবং সবচেয়ে বড় ক্ষতি—মানব জীবন ও আত্মার। বিস্ফোরণের তাপ, বিকিরণ, এবং পরবর্তী বিকলাঙ্গতা মানুষের জীবনে এক বিভীষিকাময় ছাপ রেখে যায়। শুধু মৃতদেহই নয়, রাস্তাঘাটে পড়ে ছিল মানুষের গলে যাওয়া ছায়া—যা আজও সেখানকার দেয়ালে আঁকা ভয়ঙ্কর স্মৃতি হয়ে আছে।

হিরোশিমা দিবস শুধুমাত্র ইতিহাস স্মরণের দিন নয়, বরং এটি নতুন করে ভাবার সময়—মানবতা কতটা ভয়াবহ পথ বেছে নিতে পারে, যদি আমরা ক্ষমতার মোহে অন্ধ হই। এই দিনটি বিশ্বের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়: যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই; প্রতিশোধ নয়, সহানুভূতি চাই; ধ্বংস নয়, সৃষ্টি চাই।

বিশ্বে বর্তমানে অনেক দেশ পারমাণবিক শক্তি ধারণ করছে, এবং যুদ্ধের সম্ভাবনা বরাবরই থেকে যায়। কিন্তু হিরোশিমার শিক্ষা হলো—এই পথ আমাদের কোথায় নিয়ে যায়, তার এক বাস্তব উদাহরণ। শান্তি চুক্তি, নিরস্ত্রীকরণ আন্দোলন এবং গণসচেতনতা এই ভয়াল ইতিহাসকে পুনরাবৃত্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

হিরোশিমা এখন শুধু একটি শহরের নাম নয়, এটি একটি প্রতীক—সহানুভূতির, মানবিকতার, এবং জেগে ওঠার। প্রতিটি হিরোশিমা দিবসে আমরা যেন নিজেদের প্রশ্ন করি, আমরা কি সেই মানবিক সমাজ গড়তে পারছি, যেখান থেকে যুদ্ধের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী উত্তর রেখে যাচ্ছি?

এই দিনে বিশ্ব জুড়ে শান্তি প্রার্থনার মোমবাতি জ্বলে ওঠে, বোমায় নিহতদের স্মরণে মাথা নত হয়, আর মানুষ ভাবতে শেখে—একটি ভুল সিদ্ধান্ত কত জীবনকে গ্রাস করতে পারে।

হিরোশিমা দিবস একটি বার্তা—"আমরা যেন আবার না করি সেই ভুল।"

 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon