নরেন্দ্রনাথ কুলে
বাংলায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে পুলিশ । পুলিশের ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যক্তিবিশেষে দলবিশেষে আলাদা আলাদা তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না । কারণ পুলিশ আইন ভাঙতে পারে আবার আইন রাখতে পারে । তাদের এমন ক্ষমতা অচেনা বা অজানা নয় । তা বলে শিক্ষক আইন ভাঙ্গবে ? না, শিক্ষক আইন ভাঙ্গুক আর নাই ভাঙ্গুক, তাঁদের আন্দোলনে আইন ভাঙ্গার ব্যবস্থা প্রশাসন কিভাবে করবে তা কেউ জানে না । তবে পুলিশের কথা অনুযায়ী শিক্ষকরা আইন ভেঙ্গেছে । যদি তা ভেঙ্গেই থাকে তাহলে কেন ভাঙ্গতে হল ? ক্লাসরুম ছেড়ে তাঁদের রাস্তায় দাঁড়াতে হল কেন ? এ প্রশ্ন আইনের মধ্যে পড়ে না বলে পুলিশ কি করতে পারে ! আইনের বিচারে শিক্ষকদের শিক্ষকের মর্যাদা চলে গেছে । অথচ যোগ্য শিক্ষকরা কেউই আইন ভাঙ্গেনি । আইন না ভেঙ্গে যখন আবার আইনের বিচারে শিক্ষকরা সবকিছু হারালেন, তখন সেই আইন ভাঙ্গার কারিগরদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পুলিশের কাছে আইন নেই। কারণ সেই আইন ভাঙ্গাটা যে এমন সাংগঠনিক কায়দায় হয়েছে তা পুলিশের নাকের ডগায় সবকিছু থাকলেও তারা কিন্তু নাক গলাতে পারবে না । তা ও আবার আইনেই। অথচ পদহারা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইন ভাঙ্গার অপরাধ আনা সহজ হয়ে যায় । আসলে সরকার ও তাঁর প্রশাসন যা করবে যেমন করবে তা ভুল হোক যতই জনবিরোধী হোক তুমি তার বিরুদ্ধে যাবে কেন ? সরকার ও তাঁর প্রশাসনের হ্যাঁ তে হ্যাঁ, না তে না করার অধিকার তোমার । তার বাইরে বের হতে চাইলে বিপদে তো পড়তে হবে । যদি বা বের হতে চাও, এমনভাবে বের হবে যেন সরকার বা প্রশাসনের গায়ে আঁচড় না লাগে । আঁচড় লাগলে তার আঁচ তোমাকে তো নিতে হবে । এ ব্যাপারে বাংলার পুলিশ আর দিল্লির পুলিশ বলে আলাদা কিছু নেই।
অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে দিল্লির পুলিশ গ্রেফতার করেছে । তাঁর অপরাধ সোফিয়া কুরেশি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছেন, এটা একপ্রকার লোকদেখানো এবং দ্বিচারিতা । সোফিয়ার কৃতিত্বে গর্বের পাশাপাশি গণপিটুনি, বুলডোজার অভিযান ও ঘৃণার রাজনীতি থেকে মুসলিম নাগরিকদের রক্ষা করার জোরালো দাবি তুললে সেটাই হবে প্রকৃত দেশপ্রেমিক । অধ্যাপকের এমন মন্তব্যে দিল্লি পুলিশ খুশি নয় । হরিয়ানার মহিলা কমিশন খুশি নন । অথচ তাঁর মন্তব্যে সোফিয়া প্রসঙ্গে কিংবা নারী প্রসঙ্গে কোন বিদ্বেষের ধোঁয়া উঠেছে তা একেবারেই বলা যায় না । কিন্তু পুলিশের কাছে সরকার পক্ষের তাঁবেদারদের কেউ ধুয়ো তুললেই হল । আসলে অধ্যাপক একটা অতি সত্য কথাটা তুলে ধরেছেন । শিক্ষক হোন অধ্যাপক হোন আপনারা সত্য তুলে ধরতে পারেন না । সরকার ও প্রশাসন যা বলবে তা সত্য কিংবা সত্য বলে ধরে নিতে হবে । এ কথা শিক্ষকদের জানতে হবে । নইলে তার ফল ভোগ করতে হয় । সে ফল বাংলা বা দিল্লি সর্বোত্র ফলছে ।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'চন্দ্রগুপ্ত' নাটকের আলেকজান্ডার চরিত্রের সেই বিখ্যাত উক্তি উল্লেখ করতে হয়--'সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ !'