রায় বিপ্লব
ভারতবর্ষের ইতিহাসে দেশপ্রেম একটি অটুট আবেগ, যা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে প্রতিদিনের সুরক্ষা চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু আজকের রাজনীতিতে "দেশপ্রেম" শব্দটি অনেকে এমনভাবে ব্যবহার করে যেন তা শুধুই স্লোগানের বিষয়—মূল্যবোধ নয়। বিশেষ করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, যারা এক সময় দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল, তারা আজ প্রশ্নবিদ্ধ দেশরক্ষার নীতিতে, সেনাবাহিনীর প্রতি মনোভাব ও জাতীয় নিরাপত্তা
ঐতিহাসিক ব্যর্থতা: ১৯৬২’র চীন যুদ্ধ
দেশরক্ষায় কংগ্রেসের বড় ব্যর্থতার সূচনা হয়েছিল ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধে। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সরকার সীমান্তে চীনের আগ্রাসী মনোভাব বুঝতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল। "হিন্দি চিনি ভাই ভাই" স্লোগানে মত্ত কংগ্রেস সরকার সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত না রেখে চীন সীমান্তে একঘেয়ে রাজনীতি চালিয়ে যায়, যার পরিণতিতে ভারতকে মারাত্মক পরাজয়ের মুখে পড়তে হয়। হাজার হাজার সৈনিক প্রাণ হারান—দেশবাসী হারায় আত্মবিশ্বাস।
কাশ্মীর নীতিতে দ্বৈততা ও বিভ্রান্তি
কাশ্মীর ইস্যুতে কংগ্রেসের নীতিগত দুর্বলতা বহু পুরনো। ১৯৪৭ সালে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি পরবর্তী সময়েই যখন সামরিকভাবে শক্ত জবাব দেওয়া প্রয়োজন ছিল, তখন কংগ্রেস নেতৃত্ব ভারতের বিষয়টি জাতিসংঘে তুলে দেন। এর ফলে আজও কাশ্মীর আন্তর্জাতিক বিতর্কের বিষয় হয়ে আছে। আর ৩৭০ অনুচ্ছেদ অপসারণের সময়—যা বহু ভারতীয়ের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল—তখনও কংগ্রেস দ্ব্যর্থক বক্তব্য দেয়। তারা একদিকে জাতীয় সংহতির কথা বলে, আবার অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মন রক্ষা করতে গিয়ে সরকারের বিরোধিতা করে।
সার্জিকাল স্ট্রাইক ও এয়ারস্ট্রাইকের বিরোধিতা
২০১৬ ও ২০১৯ সালে ভারতের সেনাবাহিনী যখন যথাক্রমে উরি ও পুলওয়ামার জবাবে পাকিস্তানে সার্জিকাল স্ট্রাইক এবং বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক চালায়, তখন কংগ্রেস সেই সাহসী পদক্ষেপগুলিকে অবজ্ঞা করে। নেতারা প্রশ্ন তোলেন, "সার্জিকাল স্ট্রাইকের প্রমাণ কোথায়?" কেউ কেউ তো এটিকে রাজনৈতিক নাটক বলতেও পিছপা হননি। এই মনোভাব কেবল সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়নি, গোটা জাতির মনেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।
সেনাবাহিনীকে রাজনীতিতে টেনে আনা
কংগ্রেসের একাধিক নেতা, বিশেষত তাদের যুব সংগঠনের প্রতিনিধিরা, বারবার সেনাবাহিনীর উপর রাজনৈতিক আক্রমণ করেছেন। কখনো দাবি করেছেন "আর্মি মোদির বাহিনী নয়", কখনো বলা হয়েছে "জওয়ানরা মরছে, সরকার চুপ কেন?" অথচ ইতিহাস বলছে, সীমান্তে যখনই সেনাবাহিনীকে আধুনিক অস্ত্র, উন্নত অবকাঠামো বা স্বাধীনতার প্রয়োজন পড়েছে, কংগ্রেস সরকার তখনই
Rafale বিতর্ক: রাজনীতি না দেশরক্ষা?
ভারতের সামরিক শক্তিকে আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল Rafale যুদ্ধবিমান চুক্তি। বর্তমান সরকার যখন এই চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করল, তখন কংগ্রেস প্রশ্ন তোলে "চুক্তি দুর্নীতিগ্রস্ত"। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের সময় এই চুক্তি ঝুলে ছিল। আজ ভারতীয় বায়ুসেনার আধুনিকীকরণ সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র সেই সিদ্ধান্তের জন্য, যাকে কংগ্রেস তখন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিল।
জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে তথাকথিত উদারনীতি
কংগ্রেস আজ একটি স্ববিরোধী দল। একদিকে তারা "ধর্মনিরপেক্ষতা" ও "উদারনীতি"র কথা বলে, আবার অন্যদিকে দেশরক্ষার প্রশ্নে উগ্র জাতীয়তাবাদকে দোষারোপ করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—দেশপ্রেম কি কখনো উগ্র হতে পারে? যখন একজন ভারতীয় নিজের দেশ, সেনা ও সংস্কৃতিকে ভালোবাসে, তখন সেটি 'উগ্রতা' নয়, সেটি জাতীয় চেতনার প্রকাশ। কংগ্রেস আজ এই আবেগকেই ‘গডসে’র সঙ্গে তুলনা করে, অথচ তাদের নিজস্ব নেতৃত্ব বারবার ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করেছে, যা শুধুই বিভাজনের কাজ করেছে।
আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা
জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা কাশ্মীর বিষয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত যখন দৃঢ় অবস্থান নেয়, তখন কংগ্রেসের একাংশ বিদেশি সংবাদমাধ্যমে কিংবা সভায় ভারতবিরোধী মন্তব্য করতে পিছপা হয় না। এই অপপ্রচার শুধু সরকারের নয়, দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হওয়া উচিত দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া—বিরোধিতার নামে দেশকে হেয় করা নয়।
গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে চুপচাপ অবস্থান
২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় চীনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী বুক চিতিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু কংগ্রেস সেই সময়ে সেনাবাহিনীর পক্ষে না দাঁড়িয়ে চীনের পক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে "সরকার মিথ্যা বলছে" বলে অভিযোগ তোলে। জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতে এই ধরণের রাজনৈতিক কৌশল যে জাতীয় নিরাপত্তাকে কতটা বিপন্ন করে তোলে, তা তারা বুঝতেই চায় না।
দেশরক্ষা আর দেশপ্রেম কেবল শব্দ নয়—এগুলো জাতির অস্তিত্বের মূলভিত্তি। আজ যারা প্রতিটি দেশীয় অর্জনে প্রশ্ন তোলে, দেশের সাফল্যকে অবজ্ঞা করে এবং সেনাবাহিনীর মনোবল ভাঙে, তাদের মুখে দেশপ্রেম মানায় না। কংগ্রেস দল আজ শুধু রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত, ত্যাগ আর নীতির পথে নয়। স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া দল আজ নিজের আদর্শ হারিয়ে গিয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিতে।
ভারতীয় জনগণ আজ সজাগ—তারা জানে কারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, আর কারা শুধু দেশপ্রেমের নাম ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। আজ সময় এসেছে, যখন দেশের প্রতিটি নাগরিককে নতুন করে ভাবতে হবে—দেশপ্রেম কাদের জন্য আদর্শ, আর কাদের জন্য কেবল প্রচারণার পন্থা।