(১৯৫৬ সালে সোভিয়েত লেখক সংঘের আমন্ত্রণে এশিয়া - আফ্রিকা লেখক সম্মেলনের আয়োজন সভায় ভারত থেকে সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে তিনি রাশিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতার অংশ হিসাবে " মস্কোতে কয়েকদিন " বইটি প্রকাশ করেন। এখানে সেই অভিজ্ঞতার অংশ তুলে ধরা হয়েছে)
"রাশিয়া সকল দেশের সঙ্গে ফ্রান্সকে ফেলেও এগিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেও সেই আবেগ এবং স্পর্শ আছে। আজ বিপ্লবোত্তর রাশিয়ার মানুষের সকল নতুন শিক্ষাদীক্ষা এবং সংগঠনের মধ্যেও সেই স্পর্শ পাওয়া যায়। সবলদেহ, প্রচুর আহার গ্রহণের শক্তি, খোলা প্রাণ, আবেগ এদের বৈশিষ্ট্য। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিবার, গৃহ, প্রেমের স্থান কতটা তা সঠিক আমি বলতে পারবো না। কিন্তু, এর তৃষ্ণা এদের ধাতুগত। সেই কারণেই এরা যুদ্ধ চায় না, অকৃত্রিম কামনায় শান্তি চায়। কিন্তু, যুদ্ধ লাগলে এরা উন্মাদ হতে পারে ( পৃষ্ঠা - ৬৭) ।
...এদের হৃদয়ে যত বল, এরা তত সরল গভীর বিশ্বাসে আঁকড়ে ধরে থাকে পরিচালককে, সহজে সে বিশ্বাস হারায় না। জাতটি বড় ভাল। বিপ্লবের পর তারা নতুন শিক্ষা নতুন ধারণার মধ্যেও সেই পুরানো হৃদয় হারায়নি । তাই তারা সহ্য করেছে সেই নিষ্ঠুর শাসন, যার নিন্দা বর্তমান শাসকেরা নিজেরাই করেছেন (পৃষ্ঠা - ৬৮)।
...জাতিটি বড় ভাল। একটা জিনিষ এরই মধ্যে এরা পেয়েছে, সেটা দেখে ঐ আশা বেড়েছে। এদের মধ্যে কালো - সাদা - পীত জাতীর বিদ্বেষ নেই ; বিদ্বেষ দূরের কথা, অবজ্ঞাও নেই। এটা নিশ্চিত, চোখে দেখেছি এই কঠিন স্বভাব বিদ্বেষ থেকে সোভিয়েত রাশিয়ার মানুষেরা মুক্তি পেয়েছে। সহজ মানবপ্রীতি বড় সাধনার বস্তু। নাম রাজনৈতিক মতবাদ থেকেই এর সৃষ্টি। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনের নিয়মাধীনে থেকে আজ সে সহজ স্বভাব ধর্মে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে রাজনীতি উচ্চ পর্যায়ে যতটুকুই থাক, সোভিয়েত রাশিয়ার সাধারণ মানুষের এই প্রীতির মধ্যে রাজনীতি নেই (পৃষ্ঠা - ৭০)।"
তথ্য সূত্র: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, "মস্কোতে কয়েকদিন " আশ্বিন, ১৩৬৫ বঙ্গাব্দ (ইংরেজি ১৯৫৮ সাল) , কলকাতা ।
তথ্য সংগ্রাহক ও সম্পাদনা : ড. রাজীব সিকদার, কলকাতা ।