নরেন্দ্রনাথ কুলে
'পাশবিক' শব্দটির সাথে 'পশু' শব্দের সম্পর্ক। 'পৈশাচিক' শব্দের সাথে 'পিশাচ' শব্দের সম্পর্ক। 'নারকীয়' শব্দের সাথে 'নরক' শব্দের সম্পর্ক । অথচ এই তিনটি শব্দ আবার মানুষের সম্পর্কেও ব্যবহৃত হয় । এই শব্দের ব্যবহারে বোঝা যায় মানুষের কর্মকান্ডের পরিচয় । 'নির্ভয়া', 'হাথরাস', আরজিকর'-এর মত ধর্ষণ কান্ড এই তিনটি শব্দ দিয়ে ঘটনার সাথে যুক্ত মানুষদের পরিচয় মানুষ কিনা সে প্রশ্ন অবান্তর নয় । মানুষ মানুষকে পরিস্থিতি বিশেষে পশুর শাবক নামে গালি দিতে শোনাও যায় । এমনকি মানুষকে পিশাচের সাথে তুলনা করতেও শোনা যায় । পিশাচ ও নরক শব্দ কাল্পনিক অর্থে পার্থিব ঘটনা ক্ষেত্রবিশেষে মানুষ প্রকাশ করে । তাবলে মানুষ পশুবৎ তা একেবারেই নয় । কিন্তু কিছু ঘটনা সমাজে এমন মানুষদের কর্মকান্ড বলে দেয় যে মানুষের প্রবৃত্তির মান অবনমন হচ্ছে । সামাজিক শিক্ষার উন্নত মান তথাকথিত সভ্যতার আলোয় সেভাবে বিকশিত হতে পারছে না । শিশু ও বৃদ্ধা ধর্ষণের ঘটনা সে কথাটাই বলে দেয় । কিছুদিন আগে দিল্লির এক ধর্ষণের ঘটনা মনুষ্য সমাজের স্তর পশু সমাজের স্তর বলাটা সভ্য সমাজের অন্ধকারকেই ইঙ্গিত করে । বৃদ্ধা মাকে তাঁরই সন্তান ধর্ষণ করেছে । নিজের মা'কে সাজা দিতে ছেলে ধর্ষণ করেছে । এ ঘটনায় মনোবিজ্ঞান যাই ব্যাখ্যা করুক, তবে ব্যতিক্রম ঘটনা বলে সমাজের সংকটকে আড়াল করা যাবে না । গ্রীক পুরাণে ছেলে ও মায়ের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে এই ঘটনার তুলনা অনেকেই করতে পারেন । কিন্তু এই তুলনা এ দেশের সমাজের সংকটকে এড়িয়ে যেতে পারবে না । নারী কেবল দেহ সর্বস্ব এই ভাবনার ডিএনএ এভাবে জেগে উঠলে সমাজে সম্পর্কের অনুভূতিটাই হারিয়ে যাবে । এমনিতেই সমাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার চলমান পরিবেশে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ঘনত্ব নষ্ট হচ্ছে । এখানেও থেমে থাকছে না । সম্প্রতি সমাজ মাধ্যমে একটি ধর্ষণের ঘটনার খবর চমকে দিয়েছে । এ ঘটনা সত্য হলে মনুষ্য সমাজের আলাদা পরিচয়টা সংকটে পড়বে । যদিও ব্যতিক্রম ঘটনা বলে একেবারে এড়িয়ে যাওয়া যায় না । মধ্যপ্রদেশের এক ব্যক্তি গোরুকে ধর্ষণ করেছে বলে সমাজ মাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত । এই খবর সমাজের বিবেককে আঘাত না করে পারে না । একটি কথা বলতে হয় যে এমন অপরাধের মত ঘটনা একটি মানুষের দ্বারাও ঘটবে কেন ? শুধু কি এমন অপরাধী মানুষের মানসিক সমস্যা ? নাকি আজকের সমাজ মানুষকে তার মনুষ্য পরিচয়ের বিবেককে 'কোমা'য় নিয়ে যেতে চাইছে । মনুষ্য সভ্য সমাজের সংস্কৃতি বলতে আজ কি দিতে পারছে, কিংবা কোন দিকে চালিত হচ্ছে তার চর্চাটা আজকের বেশি করে প্রয়োজন । নইলে ব্যতিক্রম ঘটনাগুলো আর ব্যতিক্রম থাকবে না ।