পিয়া রায়
চেক প্রজাতন্ত্রে দুর্গাপূজা বাঙালি প্রবাসীদের কাছে এক ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলা, যা শিকড়ের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা এবং সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতিফলন। প্রথমদিকে ছোট আকারে শুরু হলেও, ধীরে ধীরে এটি বৃহত্তর আয়োজনে পরিণত হয়েছে, যেখানে মন্দির, কমিউনিটি সেন্টার এবং স্থানীয় হলঘরে পূজার আয়োজন করা হয়।
পূজার আয়োজনের জন্য স্থানীয় শিল্পীদের সাহায্যে প্রতিমা তৈরি করা হয়, যা প্রায়ই ফাইবারগ্লাস বা থার্মোকল দিয়ে নির্মিত হয়। এই প্রতিমাগুলি মায়ের রূপের পূর্ণতা এবং বাঙালি শিল্পকলার নিদর্শন হিসেবে স্থানীয়দের কাছে প্রশংসিত। পূজার সময় ঢাকের বাদ্য, উলুধ্বনি এবং ধুনুচি নাচের মাধ্যমে উৎসবের আবহ সৃষ্টি হয়, যা প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে একাত্মতার অনুভূতি জাগায়।
খিচুড়ি, লাবড়া, বেগুনি, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি ভোগের আয়োজন প্রবাসী বাঙালিদের কাছে একটি বিশেষ আকর্ষণ। ভোগ পরিবেশন শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং এটি একটি সামাজিক মিলনমেলার ক্ষেত্র, যেখানে সবাই একত্রিত হয়ে আনন্দ ভাগ করে নেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি ইত্যাদি পরিবেশন করা হয়, যা বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ। প্রবাসী শিশু-কিশোররা অংশগ্রহণ করে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায়, যা তাদের মাতৃভূমির সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করে।
দুর্গাপূজা চেক প্রজাতন্ত্রে শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি, যেখানে বাঙালি সম্প্রদায় তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং একাত্মতার অনুভূতি প্রকাশ করে। এই উৎসব প্রমাণ করে যে, ভৌগোলিক দূরত্ব সংস্কৃতিকে থামাতে পারে না; বরং এটি নতুন রূপে বিকশিত হয়, যা প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে শিকড়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে।
ছবি: সংগৃহীত