টাকা হাতে আউশগ্রাম ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস চ্যাটার্জী ও তৃণমূল নেতা প্রশান্ত গোস্বামী, ছবি ঝিলিক খাতুন
মৌসুমি রায় দত্ত
পূর্ব বর্ধমান: '..দাদা নিতে বলেছে, তুমি হাফ আমাদের হাফ'! বাঁচাবে তো সেই। ভাইরাল ভিডিতে সে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে আউশগ্রাম ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস চ্যাটার্জীকে। তোলাবাজির সেই ভিডিও বার্তায় দেখা যাচ্ছে তাপস চ্যাটার্জীর পাশে বসে রয়েছেন মাথায় টুপি পরে আউশগ্রাম ১ ব্লকের আরও এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা। তিনি প্রশান্ত গোস্বামী! দু'জনে মিলে বিধায়ককে ফোন লাগিয়ে রেকর্ড কর্তাকে নানা ভাবে, বিভিন্ন সরকারি কাজ থেকে তোলা নেওয়ার কথা বলছেন। এবং কাজ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিতে, চাপ দিয়ে হুমকি দেওয়ার কথাও বলছেন। আউশগ্রামে এই সংস্কৃতি নতুন কিছু নয়! আউশগ্রামে বিধায়কের সঙ্গী একাধিক তৃণমূল নেতা তোলাবাজি ও মহিলা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক!
আবারও দুটি অডিও এবং একটি গোপনে তোলা ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে শুরু করাতে ফের বিতর্ক আউশগ্রাম ১ নং ব্লক তৃণমূলের অন্দরে! এবার এই দুই দাপুটে তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের পারস্পরিক কথোপকথনে নাম জড়ালো বিধায়কেরও! ভিডিওতে একে অপরকে বলতে শোনা যায়,
'..দাদা বলেছে তুমি হাফ নিয়ে নাও গা, আর আমাদের ৫০-৫০!' 'এটা তুমি যাই বলো, খেলছে তোমার অরূপদাই।'
'এমএলএ সাহেব না থাকলে তুমি বাঁচতে পারতে না পরশুরাম!' বাধ্য ছেলের মতো সাই দিল ভিডিও কর্তা!
একটি ভিডিও ও দুটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে ভাইরাল হতেই মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের সরগরম আউশগ্রামের রাজনীতি। ফের বিতর্ক তুঙ্গে আউশগ্রাম ১ নং ব্লক তৃণমূলের রাজনীতিতে! এবার তোলাবাজিতে বিধায়কের নাম উঠে এলো, ব্লক তৃণমূলের নেতাদের পারস্পরিক বক্তব্যে! এর আগেও আউশগ্রামের বিধায়কের বিরুদ্ধে একাধিক দুনীতি, নারীদের প্রতি অসভ্যতামী, নানান খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল! এবার ব্লকের একাধিক সরকারি কাজের তোলা আদায়ে উঠে এলো তার নাম, এমন অভিযোগ! ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে বিধায়ক গোষ্ঠীর দুই তৃণমূল কংগ্রেস নেতা, একজন আউশগ্রাম ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস চ্যাটার্জী ও অন্যজন প্রশান্ত গোস্বামী নামের এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতার সঙ্গে ভিডিওতে দেখা যায়, ব্লক এলাকার বিভিন্ন কাজের তোলা আদায়ের ভাগবাটোয়ারা করতে। যদিও ভিডিও কর্তাকে দেখা যায়নি। ভিডিও কর্তা সে নিজের মোবাইল ব্যবহার করে এই ভিডিওটি তুলেছে, এটা ভিডিও থেকে স্পষ্ট অনুমান হয়! তাহলে তৃণমূলের অন্তঃকলহ থেকেই কি আউশগ্রাম ১ ব্লকে একের পর এক গোপন অপকর্মের ভিডিও প্রকাশ্যে আসছে? ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায় তারা আউশগ্রাম ১ নং ব্লক এলাকা চত্বরে বসেই বিধায়কের সঙ্গে কথা বলছে, বলে ফোন ধরিয়ে ভিডিও কর্তার থেকে টাকার প্যাগেট নিচ্ছে আউশগ্রাম ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস চ্যাটার্জী! আর তার পাশে মাথায় টুপি পরে বসে তৃণমূল নেতা প্রশান্ত গোস্বামী তোলাবাজির আরও ঠিকানা বাতলে দিচ্ছেন! জনগণের মাথায় নিত্যদিন টুপি পড়িয়ে, এভাবেই আউশগ্রাম জুড়ে বিধায়কের অঙ্গুলি হেলনে চলছে দেদার তোলাবাজি বলে অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের অন্দরেই! ভাইরাল ভিডিও বার্তায় দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের আউশগ্রাম ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস চ্যাটার্জী ও প্রশান্ত গোস্বামীকে টাকা নিতে, বিধায়কের কথা বলে। তাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া আর কথাবার্তাও শোনা যায়।
তাপসঃ এমএলএ সাহেব না থাকলে তোমার পদ থাকত না।
রেকর্ড কর্তাঃ আমাদের যেটা দিয়েছিল দাদাকে দিয়েছি পুজোর সময়।
তাপস ও প্রশান্ত গোস্বামীঃ (সমস্বরে) তুমি একবার চাপ দাও।
রেকর্ড কর্তাঃ ছোট্টু এখনও পঞ্চাশ দেয়নি।
দুই দশ আছে।
তাপসঃ হাপ তুমি আর হাপ আমাদের দাও।
দাদার সাথে কথা হয়েছে। বাঁচাবে তো সেই। দাদা নিতে বলেছে।
লিস্ট চলে এসেছে। দাদাকে বলেছি শান্তার কাছে। শান্তা ছিল সেখানে। দাদাকে একবার তাদের (মুরগী/ বলি হওয়া পাবলিক) ডেকে বলতে হবে। তিনটে নাম এসেছে, পিএইচই।
ভিডিও কর্তাঃ বাকি পঞ্চায়েত গুলো তো হয়ে গেছে। আমাদেরই শুধু বাকি। আমি তোমায় বলে ছিলাম, লক্ষ্মীগঞ্জের পিএইচই র কাজে ঢুকাতে হবে, নারাণকে আর রবিকে। তাহলেই ব্যালেন্স হয়ে যাবে। শান্তিরামের টা তো দেওয়াই আছে।
তাপসঃ সাড়ে পাঁচটা থেকে কন্ট্রাক্টারদের মিটিং আছে।
টাকা না দিলে চালাবো কি করে!
ভিডিও কর্তাঃ আমি তো দাদাকে বলেছি সাপ, ব্যাঙ্গ যাকে করবে করো। আমার কোনো অসুবিধা নেই।
এই কটা বাণ্ডিল আছে গুনে দে। পুরোটা গুণতে হবে না।
শুধু বাণ্ডিল গুলো গুণলেই হবে।
ভিডিও কর্তাঃ দেড়, দেড় আছে।
তাপস ও প্রশান্তঃ দাদা ঢুকবে এখুনি। চলো খেয়ে নিয়ে কথা বলি।
প্রশান্তঃ চলো একসাথে খেয়ে নিয়ে কথা বলে নিচ্ছি। আজকে ঝামেলাটা মারো।
দাদাকে তাহলে ফোন করে বলে দিচ্ছি। এই বলে তাপস চ্যাটার্জী ফোন ধরিয়ে বলে, হ্যাঁ তাহলে পেয়ে গেছি। আমি যাচ্ছি যাচ্ছি। চলো তাহলে একসাথে খেয়ে নি। পাশ থেকে প্রশান্ত বলে, এমএলএ র সামনেই দিয়ে দেবে।
তাপসঃ না তুমি বুঝতে পারছো না। এমএলএ আমাকে বলে দিয়েছে।
ভিডিও কর্তা বলে, আমি যা পেয়েছিলাম সব দাদাকে দিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর আমাকে আর কিছু দেয়নি।
প্রশান্তঃ তাহলে দাঁড়াও দাদাকে বলেদি, খাবারের ব্যাপারটা। চলো একসাথে খাবো। ওখানেই সব আলোচনা হবে।
শেষে জানা গেল দাদাটা আসলে কে! ফোন ধরাতেই ফোনের ওপার থেকেই ভেসে এলো, খুবই একটা চেনা গলা! এই গলাতো আউশগ্রামের সেই বিধায়কের। যিনি কয়েকদিন আগে বলেছিলেন ও শালা আসবে না। এলে শালাকে খাবারে লঙ্কা গুঁড়োর ঝাল দিয়ে মেরে দেব!
অপর দুটি অডিও ক্লিপে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, মেয়ে দেওয়ার বিষয়ে আউশগ্রাম ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস চ্যাটার্জীকে নানা কথা বলতে! যদিও সেই কথাবার্তা শোনার পর খনিকটা অপরিস্থিতিতে পরে যান বিতর্কিত এই তৃণমূল নেতা!