নরেন্দ্রনাথ কুলে
বাংলার উন্নয়নের নামে আবারও এক 'শ্রী' বৃদ্ধি হল । মাননীয়া তাঁর নতুন প্রকল্পে নতুন 'শ্রী' যুক্ত করলেন । বাংলার ছাত্র, যুবক, কন্যা থেকে নারী সবার শ্রী ফেরাতে তিনি শুধু 'শ্রী' যোগ করেন নি । তাঁদের আর্থিক ক্ষমতায়নের নামে 'শ্রী' তাঁরই অনুদান-শ্রী । এই 'শ্রী' বাংলার মানুষের শ্রী দিয়েছে কিনা তার রাজনৈতিক তর্ক যাই থাক, তবে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছে বিদেশের মাটি থেকে পুরস্কার এনে । এখন শ্রমিকের 'শ্রী' ফেরাতে তাঁদের শ্রমে 'শ্রী' যুক্ত হল । কর্মশ্রী নয় । কর্মশ্রী র শ্রমিক পায় একশো দিনের কাজ । আর নতুন শ্রী'র শ্রমশ্রী সকল শ্রমিকের জন্য নয় । এই 'শ্রী' পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য। অবশ্য যাঁরা ভিন্ রাজ্য থেকে কাজ ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসবে তাঁদের জন্য এই 'শ্রী' র ঘোষণা । বাইশ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক সকলে ফিরে এলে এমন 'শ্রী' দিতে পারবেন ঠিকই । কিন্তু সকলকে কাজ দিতে পারবেন কিনা তার নিশ্চয়তা কি ? যদিও বিবৃতির পরিসংখ্যানে সব সম্ভব করে তোলা যেতে পারে ।
মাসিক পাঁচ হাজার টাকার 'শ্রী' ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের শ্রী বৃদ্ধি হবে কিনা সে প্রশ্ন আলাদা । তবে পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী এবং সন্তানদের সরকারী স্কুলে ভর্তির সুযোগ মিলবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে । রাজ্যের বাইশ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য এই ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে । এ বিষয়ে কয়েকটি কথা বলতে হয় । 'শ্রমশ্রী' প্রকল্প বলে দিচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবার খাদ্যসাথী ও স্বাস্থ্যসাথী র মত সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত । অর্থাৎ সকল পরিযায়ী শ্রমিক তাঁদের পরিবার পরিজন নিয়েই ভিন্ রাজ্যে কাজ করছে । তাই কি সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত ? পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যায়, কিন্তু পরিবার পরিজন সাথে যায় কি ? যাঁদের পরিবার পরিজন এই বাংলার গ্রামেই থাকে তাঁরা খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী থেকে বঞ্চিত হল কেন, তাঁদের সন্তানরা স্কুল থেকে বঞ্চিত কেন ? আর যদি বঞ্চিত না হয়ে থাকে তাঁদের জন্য নতুন করে সুবিধার কথা ঘোষণা করা হল কেন ? বাইশ লক্ষ শ্রমিকের জন্য যে ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, তাঁরা সকলেই তাহলে পরিবার পরিজন সাথে নিয়ে ভিন্ রাজ্যে রাজ্যে কাজ করছে । এটা বিশ্বাসযোগ্য কিনা তা শুধু নিন্দুকেরা বলবে তা কিন্তু নয় ।
ভিন্ রাজ্য বিশেষত বিজেপি সরকার শাসিত রাজ্যে বাঙালি হেনস্থা বাংলার মাননীয়াকে ভোটের প্রস্তুতিতে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে । 'শ্রমশ্রী' পরিযায়ী শ্রমিকের শ্রীবৃদ্ধি র কথা বললেও সরকার তাঁর উন্নয়নশ্রী র কথা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলবে । খেলাটা এখানেই নয় । বাইশ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক চিহ্নিত কিভাবে তা স্পষ্ট নয় । শ্রমশ্রী পোর্টাল তথ্যে ভরে উঠবে কিভাবে ? এ প্রশ্ন সরকারের এ পর্যন্ত কর্মপদ্ধতির প্রচলিত স্বচ্ছতা কি তা প্রমাণ করেছে ? যে প্রশাসনের পরতে পরতে দুর্নীতির লেই যেভাবে লেপটে আছে তা আজ কি শুধু ওপেন সিক্রেট ? তবে এই ধরণের 'শ্রী' একের পর এক যুক্ত করে বাংলার 'উন্নয়ন-শ্রী' র কথা ফুলে উঠতে পারে, কিন্তু বাংলার 'মানসিক-শ্রী' বৃদ্ধি হয়েছে তা একেবারেই বলা যায় না । তবে ভোট-মানবিক হিসেবে মাননীয়ার জুড়ি মেলা ভার।