যোগমায়া আচার্য
ভারত প্রতিবছর ২০ আগস্ট পালিত করে Indian Akshay Urja Day বা ভারতীয় অক্ষয় শক্তি দিবস। এই বিশেষ দিনটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির গুরুত্ব তুলে ধরতে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে পালন করা হয়। সূর্য, বাতাস, জল, বায়োমাস কিংবা ভূ-তাপীয় শক্তি—এমন সব অক্ষয় উৎসের মাধ্যমে জ্বালানি আহরণই ভবিষ্যতের নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব পথ।
প্রথমবার ২০০৪ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই দিনটি পালিত হয়। দিনটি কাকতালীয়ভাবে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর জন্মতিথির সঙ্গেও যুক্ত, যিনি প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে নবীন চিন্তাধারাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্নের ভারত গড়তে হলে, শক্তির টেকসই ব্যবহার ও পরিবেশ রক্ষাই আজকের মূল শর্ত।
অক্ষয় শক্তি শুধু পরিবেশ রক্ষার হাতিয়ার নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শক্তি-নিরাপত্তার ভিত্তিও। জীবাশ্ম জ্বালানি সীমিত, আবার এর ব্যবহারে বাড়ছে দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা। বিপরীতে নবায়নযোগ্য শক্তি নিঃসন্দেহে পরিচ্ছন্ন, অক্ষয় এবং তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। সূর্যের আলো বা বাতাসের প্রবাহ কখনও শেষ হয়ে যায় না, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এদের ব্যবহার আরও সহজ ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে।
ভারত আজ বিশ্বের অন্যতম নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদক দেশ। সৌর শক্তি পার্ক, বায়ু শক্তি প্রকল্প, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বায়োগ্যাস প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামীণ ও শহুরে জীবনকে আরও টেকসই করে তোলা হচ্ছে। “International Solar Alliance” এর মাধ্যমে ভারত বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিচ্ছে সূর্যশক্তির প্রসারে। এ যেন এক নতুন যুগের সূচনা, যেখানে ভারত শুধু নিজের শক্তি চাহিদা পূরণ করছে না, বরং পৃথিবীর জন্যও পরিবেশবান্ধব সমাধান তৈরি করছে।
অক্ষয় শক্তি দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতিটি মানুষও এই আন্দোলনের অংশীদার হতে পারে। ছাদের ওপর সোলার প্যানেল বসানো, বায়োগ্যাস ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া, বৈদ্যুতিক যানবাহন গ্রহণ করা বা দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা—এসব ছোট পদক্ষেপ একসঙ্গে মিলে গড়ে তুলতে পারে এক বৃহৎ পরিবর্তন।
সবচেয়ে বড় কথা, নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে অগ্রসর হওয়া মানে শুধু পরিবেশ রক্ষা নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলা। টেকসই উন্নয়নের মূলমন্ত্রই হলো এমন এক জীবনযাপন, যেখানে আজকের চাহিদা পূরণ হয় আগামী দিনের সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
Indian Akshay Urja Day তাই কেবল একটি দিবস নয়, বরং এটি একটি অঙ্গীকার—পরিষ্কার শক্তির পথে হাঁটার অঙ্গীকার, প্রকৃতিকে রক্ষার অঙ্গীকার, আর আগামী দিনের জন্য এক টেকসই ভারতের স্বপ্ন বুননের অঙ্গীকার।