Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

বিশ্ব দরবারে দুর্গাপুজো: ইকুয়েডর

 


পিয়া রায়

 

ইকুয়েডরের মতো একটি দক্ষিণ আমেরিকান দেশে দুর্গাপুজোর উপস্থিতি শুনে অনেকেই বিস্মিত হতে পারেন। তবে প্রবাসী ভারতীয়দের আন্তরিকতা ও সাংস্কৃতিক শিকড়ের প্রতি গভীর টান এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। যদিও ইকুয়েডরে ভারতীয় সম্প্রদায়ের সংখ্যা খুবই কম, তবুও তারা নিজেদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে তা ভাগ করে নিতে দুর্গাপুজোর মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসব পালন করে চলেছেন। বিশেষত রাজধানী কুইটো এবং বাণিজ্যিক শহর গুয়ায়াকুইলে দুর্গাপুজোর ছোট ছোট আয়োজন চোখে পড়ে।

ইকুয়েডরের দুর্গাপুজো মূলত ভারতীয় দূতাবাস, স্থানীয় ভারতীয় পরিবার ও বাংলাদেশি প্রবাসীদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়। আয়োজনের ভৌগোলিক পরিসর ছোট হলেও তার আন্তরিকতা ও সংস্কৃতিমূল্য প্রশ্নাতীত। পুজোর দিনগুলোতে কমিউনিটি সেন্টার, কোনো প্রবাসীর বাড়ি বা দূতাবাসের নির্দিষ্ট প্রাঙ্গণে প্যান্ডেল বানানো হয়, যেখানে দেবীর প্রতিমা সাধারণত মূর্তি আকারে আনা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে রঙিন কাপড় ও থার্মোকলে তৈরি প্রতীকী প্রতিমা, অথবা প্রিন্টেড ছবি ব্যবহৃত হয়। অনেকে আবার ভার্চুয়াল প্রতিমা বা স্ক্রিনে প্রদর্শিত ভিডিওর সাহায্যে পূজা করেন।

পুজোর রীতিনীতি যথাসম্ভব বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত একাধিক দিনে অঞ্জলি, চণ্ডীপাঠ, সন্ধিপুজো ও আরতি অনুষ্ঠিত হয়। পেশাদার পুরোহিতের অনুপস্থিতিতে কোনো প্রবাসী সদস্যই দায়িত্ব নেন মন্ত্র পাঠের। কোনো কোনো বছর ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভারতে থাকা পুরোহিতকে যুক্ত করেও পুজো পরিচালনা করা হয়। বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়, এখানে দুর্গাপুজো শুধুই ধর্মীয় অনুশীলন নয়, বরং একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা হয়ে ওঠে।

ভোগ রান্না ও পরিবেশন এখানকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রবাসী পরিবাররা একত্রে রান্না করেন খিচুড়ি, বেগুনভাজা, লাবড়া, টমেটো চাটনি ও পায়েস। অনেক সময় স্থানীয় ইকুয়েডরিয়ান বন্ধুদেরও এই ভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যার ফলে ভারতীয় রান্নার স্বাদ ছড়িয়ে পড়ে দেশজ সংস্কৃতির গণ্ডি পেরিয়ে। এই অভিজ্ঞতা স্থানীয়দের কাছে এক নতুন সাংস্কৃতিক জানালা খুলে দেয়।

পুজোর পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় নাচ, গান, আবৃত্তি ও ছোট নাটকের অনুষ্ঠান। প্রবাসী বাঙালি শিশুদের জন্য এই আয়োজনে অংশ নেওয়া যেমন উৎসাহব্যঞ্জক, তেমনি তাদের শিকড়ের সাথে একটি আত্মিক সংযোগ স্থাপন করার সুযোগও এনে দেয়।

ইকুয়েডরের দুর্গাপুজো নিঃসন্দেহে সংখ্যার বিচারে বৃহৎ নয়, কিন্তু এর সাংস্কৃতিক তাৎপর্য অপরিসীম। এই আয়োজন শুধুমাত্র প্রবাসী বাঙালিদের নস্টালজিয়া নয়, বরং তাদের সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের দৃঢ় প্রকাশ। প্রতিমা না থাকলেও দেবী এখানে উপস্থিত হন অনুভবে, বিশ্বাসে ও ভালোবাসায়। এই পুজো একটি ছোট জনগোষ্ঠীর আত্মিক ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা দূর দেশে বসেও মাতৃভূমির সঙ্গে অদৃশ্য এক মধুর সেতুবন্ধন গড়ে তোলে।

 

ছবি: সংগৃহীত 

 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon