Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

বিশ্ব দরবারে দুর্গাপুজো: অস্ট্রিয়া


পিয়া রায়

অস্ট্রিয়া, ইউরোপের হৃদয়ে অবস্থিত একটি সুন্দর দেশ, যেখানে আলপস পর্বত, সুরম্য গ্রাম এবং সংগীতময় ইতিহাসের মাঝে এক ভিন্ন সংস্কৃতির স্পন্দন সৃষ্টি করে প্রতিবছর দুর্গাপুজো। যদিও এটি ঐতিহ্যগতভাবে একটি খ্রিষ্টান প্রধান দেশ, তবে অভিবাসী বাঙালিদের নিরলস প্রচেষ্টায় এখানে দুর্গাপুজো ধীরে ধীরে শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা সহ গ্রাজ ও লিনজ-এর মতো শহরগুলোতে বসবাসকারী প্রবাসী বাঙালিরা মূলত ভারত (পশ্চিমবঙ্গ) ও বাংলাদেশ থেকে আগত। তাঁদের মধ্যে বহুজন শিক্ষার্থী, গবেষক, চিকিৎসক ও পেশাজীবী, যাঁরা ইউরোপের প্রান্তে থেকেও বাংলার শিকড় আঁকড়ে ধরে রাখার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই বাঙালিদের উদ্যোগেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন, যাদের তত্ত্বাবধানে দুর্গাপুজো হয় অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে।

ভিয়েনা দুর্গোৎসব কমিটি বা Austria Bengali Association (ABA)-এর মত সংগঠনগুলি প্রতিবছর অক্টোবরে দুর্গাপুজো আয়োজন করে। ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করা হয় ভিয়েনার কোনো কমিউনিটি হল অথবা ভারতীয় দূতাবাসের সভাকক্ষ। প্রতিমা সাধারণত কলকাতা বা ঢাকার মৃৎশিল্পীদের তৈরি, যা অস্ট্রিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব না হলে অস্থায়ীভাবে স্থানীয় কারিগরদের সহায়তায় নির্মাণ করা হয়। পুজো হয় সংক্ষিপ্ত রীতিতে, কিন্তু যথাযথভাবে—বোধন, অঞ্জলি, সন্ধিপুজো, আরতির মধ্য দিয়ে মাতৃ আরাধনা সম্পন্ন হয়। কাঁচা ফুল, ধূপ-ধুনো, শঙ্খ-উলুধ্বনি এবং ঢাকের আওয়াজে মুহূর্তেই বিদেশ বিভুঁইয়ে সৃষ্টি হয় এক খাঁটি বাঙালি পরিবেশ।

এখানকার দুর্গাপুজোর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল একসাথে ধর্ম ও সংস্কৃতির উদযাপন। পুজোর পাশাপাশি আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, যেখানে বাচ্চাদের নাচ-গান, আবৃত্তি, নাটক এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনা থাকে। বিদেশি অতিথিরাও অনেক সময় উপস্থিত থাকেন, এবং এই পুজোই হয়ে ওঠে আন্তঃসংস্কৃতি বিনিময়ের এক উজ্জ্বল মঞ্চ। মায়ের ভোগের খিচুড়ি, লাবড়া, চাটনি ও পায়েস পরিবেশন করেন স্বেচ্ছাসেবীরা, যা মুহূর্তে প্রবাসীদের মনে গৃহের স্বাদ ফিরিয়ে আনে।

অস্ট্রিয়ায় দুর্গাপুজো শুধুমাত্র এক ধর্মীয় আচার নয়, বরং এটি বাঙালিয়ানার সত্তা, শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধা, এবং ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখার সংগ্রামের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। প্রবাস জীবনের ব্যস্ততা, ভাষা ও সংস্কৃতির দূরত্ব, এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রতিবছর এই পুজো নতুন উদ্যমে ফিরে আসে। এই উৎসব প্রমাণ করে, ভাষা, দেশ বা ভূগোলের সীমা পেরিয়েও বাঙালির দুর্গাপুজো কেবল রীতি নয়, এটি আবেগ, এটি পরিচয়।

ছবি: সংগৃহীত

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon