বিজেপি নেতা ভরত ঢালি, পাড়ায় সমাধান ক্যাম্পে তৃণমূল নেতা সেখ আব্দুল লালনের পাশে। চিত্র সংগ্রহ : রাখী
রাবণ মণ্ডল, আউশগ্রাম :
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উল্টো পথেই হাঁটলো রাজ্য বিজেপির কৃষাণ মোর্চার এক্সজুয়েটিভ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তথা বিজেপি নেতা ভরত ঢালি। তিনি সোমবার সকালে আউশগ্রাম জঙ্গলমহলের অজয় তীরের রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুড়ুল এফ পি স্কুলের 'আমার পাড়া, আমার সমাধান' সরকারি ক্যাম্পে হাজির হয়ে তৃণমূল ব্লক সভাপতি সেখ আব্দুল লালনের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলেন, 'আমাদের ব্লকের ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দাতা আব্দুল লালন আমাদের শ্রদ্ধার মানুষ। তিনি রাজনীতির উর্দ্ধে একজন সমাজ সেবী মানুষ। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ভবনা গ্রামীণ স্তরের মানুষের উপকারের জন্য যে জনদরদী প্রকল্প নিয়েছেন, তা সর্বাঙ্গীণ সফল করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি আপ্রাণ। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর এই জনদরদী প্রকল্পে উপকৃত হব। দীর্ঘদিন আমাদের গ্রামের ছোট ছোট রাস্তা হয়নি, ছোট ছোট জলের সমস্যা ছিল। এদিন সেটা ধরিয়েছি। ব্লক সভাপতি সেখ আব্দুল লালন বাবু কথা দিয়েছেন আপনাদের রাস্তা হবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুদানেই আগামী ছয় মাসের মধ্যে। পথশ্রী প্রকল্পের টাকা এলেই। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও আমি ফোন করে জানিয়েছি। মাননীয়া ম্যাডাম তদন্ত করতে পাঠিয়ে ছিলেন। আমরা, আমাদের গ্রামের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে ভরসা করি।' তিনি এদিন আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, 'আমাদের ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সেখ আব্দুল লালন রাস্তা করে দেবেন কথা দিয়েছেন। উনি ভালো মানুষ। এছাড়াও রামনগরের প্রধান, উপপ্রধান সাহেবও ছিলেন। আমি নিজে কাজ ধরাতে পেরে সন্তুষ্ট। '
গোপালপুর কলোনি গ্রামে বাড়ি বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য তথা রাজ্য কৃষাণ মোর্চার সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ভরত ঢালির। এদিন রাজ্য সরকারের 'আমার পাড়া আমার সমাধান' প্রকল্পের সুবিধা নিতে নিজেই সশরীরে অংশগ্রহণ করেন একদল গ্রামবাসীদের নিয়ে এদিন সরকারি ক্যাম্পে। সেই নিয়েই শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরে, তাহলে কি ভরত ঢালি বিধানসভা ভোটের আগে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সেখ আব্দুল লালনের হাত ধরে তৃণমূলে নাম লেখাবেন? সে উত্তর সময়ই দেবে বলে, এদিন সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান ভরত ঢালি।
আউশগ্রাম ২ নং ব্লকের রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর কলোনিতে বাড়ি এই প্রবীণ বিজেপি নেতার। দীর্ঘদিন এলাকায় বিজেপি করছেন। বিজেপি গোটা দেশে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই তিনি বর্ধমান জেলার বিজেপির একমাত্র মুখ। এর আগেও বিজেপির এই রাজ্য কৃষক নেতা ভরত ঢালি তৃণমূল সরকারের থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলার সেরা কৃষক সম্মান নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন। তবুও তিনি ধারাবাহিক ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের একাধিক জনমুখী প্রকল্পের প্রশংসা করেন।
এই বিজেপি নেতার উপর ভর করেই বিগত লোকসভায় পূর্ব বর্ধমান জেলায় ভালো ফল করেছিল বিজেপি। বিধানসভা ভোটের আগে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সেখ আব্দুল লালনের পাশে দাঁড়িয়ে যে ভাবে তৃণমূলের জয়গান গাইলেন, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি!
একাধিক সময়ে এই বিজেপি নেতাকে রাজ্য ও দেশের একাধিক বিজেপি নেতা, মন্ত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে, মিটিং সমাবেশে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে। তাহলে হঠাৎ কি এমন হল! যে হঠাৎ তিনি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উল্টো পথে হেঁটে, আউশগ্রাম ২ নং ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সেখ আব্দুল লালন, রামনগরের তৃণমূলের প্রধান, উপপ্রধানের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়গান করলেন!
এবিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বিজেপি নেতা ভরত ঢালিকে পাশে নিয়ে, আউশগ্রাম ২ নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সেখ আব্দুল লালন বলেন, 'বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি একজন ব্রাহ্মণ ঘরের মহিলা, আমি মুসলমান, আমার ভাই বিজেপি এই ভরত পূর্ব বঙ্গ থেকে আসা মানুষ। বিজেপি নেতারা এসআইআর করে, তাদের নাম বাদ দিয়ে দেশ থেকে তারাতে চাইছে আমাদের বাংলার মা মমতা তাদের রক্ষা করবেন। আমাদের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের হয়ে আন্দোলন করছেন। আমরা সবাই বাংলার মানুষের পাশে আছি। দিদির কথায় তাঁর প্রকল্পের অংশীদার সকলে, সেখানে বিজেপি নেতা বলে তাকেও আমরা গুরুত্ব দিয়েছি, কোনো অবহেলা করিনি এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ। দিদির প্রকল্পের অংশীদার সবাই পাবেন। সেখানে কোনো ভাগ নেই। নব্বই দিনের মধ্যে এই কাজ গুলির সমাধান হবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই।'

