রাজীব সিকদার
সালটা ইংরেজি ১৮৬৭ । স্বামী সন্তানহীনা এক নারী তাঁর সামান্য কিছু কৃষিজমি অন্য একজনের কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। ঐ মহিলার আত্মীয়রা সে ব্যাপারে আপত্তি তুললেন। কারণ মহিলার অবর্তমানে তাঁর জমিজমা তাঁর ঐ আত্মীয়দের প্রাপ্য। তাঁরা ঐ জমির দখল নিতে চাইলেন। মহিলা তা দেবেন না । তাতে তাঁকে পথে বসতে হবে। আত্মীয়রা জমি দখল করলে তাঁর চলবে কি করে ? তিনি গেলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। বিদ্যাসাগর মহিলাটির সমস্ত কথা শুনলেন। বিদ্যাসাগর ঐ জমির উত্তরাধিকারী দু'জনকে ডেকে পাঠালেন। একজন এলেন, অন্যজন এলেন না। যিনি এলেন বিদ্যাসাগর তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন এবং বর্তমানে যাতে ঐ মহিলার সাথে জমি নিয়ে বিবাদ না হয় সেই জন্য অনুরোধ করলেন। কিন্তু, আত্মীয়টি তাতে রাজি হলেন না। মহিলাটিকে জমি বন্ধক রাখতে দেবেন না তিনি। বিদ্যাসাগর তখন নায়েবের স্মরণাপন্ন হলেন। নায়েব মহিলাটির আত্মীয়দের জানিয়ে দিলেন, গায়ের জোরে মহিলাটির জমি ভোগদখল করা চলবে না। আত্মীয়েরা তখন তালুকদারের সাহায্য নিয়ে মহিলাটিকে সেই জমি থেকে উচ্ছেদ করতে চাইলেন। বিদ্যাসাগর সেকথা জানতে পেরে তালুকদারকে পত্র লিখলেন। তালুকদার সে পত্র অগ্রাহ্য করলেন এবং মহিলাটিকে জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টায় ব্রতী হলেন। মহিলাটির আত্মীয়রা জমি দখল নেওয়ার জন্য মামলা করলেন। বিদ্যাসাগর সব বিষয়ের খোঁজ খবর রাখতেন এবং ঐ মহিলা বিদ্যাসাগরকে সমস্তই জানিয়ে রেখেছিলেন। বিদ্যাসাগর মোকদ্দমার সময়ে দেশে উপস্থিত হলেন । বিদ্যাসাগরের ভয়ে মহিলাটির মোকদ্দমাকারী আত্মীয়েরা মোকদ্দমা-স্থলে হাজিরা দিলেন না। ফলে সম্পত্তিতে ঐ মহিলার দখলই কায়েম রইলো। বিদ্যাসাগর জয়ী হলেন। জীবনের নানান সময়ে এই ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিদ্যাসাগর যা আজও অনুপ্রেরণা হিসাবে রয়ে গেছে। বিদ্যাসাগরের বিশেষত্ব এখানেই।
তথ্যসূত্রঃ শম্ভূচন্দ্র বিদ্যারত্ন, ১৮৯১, বিদ্যাসাগর জীবনচরিত, পৃষ্ঠা: ১৯৮-১৯৯