পিয়া রায়
দুর্গাপুজো শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি এক বিস্তৃত সাংস্কৃতিক ও সামাজিক চেতনার প্রতিফলন। বাংলা ও বাঙালির আবেগঘন আত্মপরিচয়ের মূল অংশ এই পুজো, যা আজ শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ বা ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাঙালিদের হাত ধরে দুর্গাপুজো এখন এক বৈশ্বিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। এমনই এক নতুন ও উল্লেখযোগ্য গন্তব্য—ভিয়েতনাম।
ভিয়েতনামে দুর্গাপুজোর সূচনা খুব পুরনো নয়। আনুমানিক ২০১৫ সালের পর থেকে এখানে বসবাসকারী ভারতীয় এবং বিশেষত প্রবাসী বাঙালি সম্প্রদায়ের উদ্যোগে দুর্গাপুজোর আয়োজন শুরু হয়। হো চি মিন সিটি এবং হ্যানয় শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছোট কিন্তু প্রাণবন্ত ভারতীয় কমিউনিটি। এদের মধ্যে অনেকেই ভারতীয় কোম্পানি, রাষ্ট্রদূতাবাস বা আইটি খাতে কর্মরত। উৎসবের সময় তারা পরিবার, বন্ধু, এমনকি স্থানীয় ভিয়েতনামিজদেরও একত্র করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন।
ভিয়েতনামের দুর্গাপুজো একদিকে যেমন বাঙালি ঐতিহ্যের সংরক্ষণ করে, তেমনই তা হয়ে উঠেছে একটি আন্তঃসাংস্কৃতিক মিলনমেলাও। এখানকার আয়োজন তুলনায় ছোট হলেও আন্তরিকতায় কোনও কমতি নেই। পূজা হয় ভাড়া করা হলে বা কমিউনিটি হলে। মন্ত্রোচ্চারণ, অঞ্জলি, সিঁদুর খেলা, ধুনুচি নাচ, এবং নবমীর খাওয়াদাওয়ায় থাকে বাঙালিয়ানা। ভিয়েতনামী অতিথিরা অনেক সময় কৌতূহল নিয়ে এই পুজোয় অংশ নেন এবং আনন্দে সামিল হন, যা দুই দেশের সংস্কৃতির মধ্যে এক সুন্দর সেতুবন্ধ তৈরি করে।
ভিয়েতনামের মতো দেশে দুর্গাপুজোর আয়োজন এক বিশাল সাংস্কৃতিক কূটনৈতিক প্রয়াসও বটে। এখানে শুধু ধর্মীয় আচারের মধ্যেই উৎসব সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি হয়ে উঠেছে প্রবাসীদের জন্য এক আত্মপরিচয়ের জায়গা, নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সংস্কৃতির পাঠশালা। বিশেষ করে যেসব শিশু বিদেশে বড় হচ্ছে, তাদের মধ্যে মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির বীজ রোপণ করতে এই পুজো এক বড় ভূমিকা রাখে।
ভিয়েতনামে দুর্গাপুজো এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে—না রয়েছে প্রচারপ্রাপ্তি, না বড় অর্থবহ আয়োজন। তবুও এই ক্ষুদ্র আয়োজনেই নিহিত আছে এক বৃহৎ সম্ভাবনা। এটি শুধু ধর্ম নয়, সংস্কৃতির, বন্ধনের, এবং পরিচয়ের এক নতুন মাত্রা তুলে ধরে। আজ যে ভিয়েতনামে দুর্গাপুজো হয়, তা আগামী দিনে বাংলা সংস্কৃতির বিশ্বায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠবে, সন্দেহ নেই।
ছবি: সংগৃহীত


