পিয়া রায়
বাংলার অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব দুর্গাপুজো আজ আর কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়। এই উৎসব আজ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে—যেখানে ছড়িয়ে রয়েছেন বাঙালি প্রবাসীরা। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আজ ফিলিপাইন—একটি খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যেখানে দুর্গাপুজোর আয়োজন সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এক অনন্য সাংস্কৃতিক সংলাপের রূপ নিয়েছে।
ফিলিপাইনে বাঙালি প্রবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাতৃসাধনার এই অনুষ্ঠানটিকে সযত্নে পালন করে চলেছেন। মূলত ম্যানিলা ও তার আশেপাশের এলাকায় বসবাসকারী বাঙালিরাই এই পুজোর উদ্যোক্তা। এখানে দুর্গাপুজো কেবল ধর্মীয় চর্চা নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে সংস্কৃতি, সঙ্গীত, নৃত্য ও খাদ্যরসিকতার এক মিলনমেলা।
ফিলিপাইনে দুর্গাপুজোর সূচনা ঘটে ২০১০ সালের আশেপাশে, যখন ভারতীয় দূতাবাস ও স্থানীয় প্রবাসী সংগঠনগুলির সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো একটি ছোট পরিসরে পুজোর আয়োজন করা হয়। মণ্ডপ, প্রতিমা, অঞ্জলি, আরতি, ধুনুচি নাচ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রসাদের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ পুজোর স্বাদ এনে দেওয়া হয়। যদিও প্রতিমা কখনও কখনও ভারত থেকে আনা সম্ভব হয়নি, স্থানীয় শিল্পীরা মাটির প্রতিমার বদলে থার্মোকল বা ফাইবার গ্লাসে প্রতিমা নির্মাণ করে মাতৃসাধনার পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করেছেন।
ফিলিপাইনে পুজোর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো—স্থানীয় ফিলিপিনো নাগরিকদের অংশগ্রহণ। এই উৎসবে তাঁরা কৌতূহল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন, বাংলা সংস্কৃতি ও রীতির সঙ্গে পরিচিত হন। এর মাধ্যমে এক প্রকার আন্তঃসাংস্কৃতিক বিনিময়ও ঘটছে, যা বিশ্বায়নের যুগে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
দুর্গাপুজোর এই আয়োজন অবশ্যই কিছু চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসে—বিশেষ করে প্রতিমা পরিবহণ, পুজোর জন্য যথাযথ স্থান পাওয়া, প্রশাসনিক অনুমোদন ইত্যাদি। তবুও, প্রবাসী বাঙালিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ফিলিপাইনের মাটিতেও দুর্গার পাঁচ দিনের আরাধনা প্রতিবারই সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়।
এই আলোচনায় স্পষ্ট যে, ফিলিপাইন এখন কেবল একটি ভৌগোলিক অবস্থান নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে সেই জায়গা, যেখানে বাঙালিরা তাদের শিকড়ের সঙ্গে এক গভীর সংযোগ স্থাপন করছে। দুর্গাপুজো তাদের জন্য কেবল একটি উৎসব নয়, বরং এটি তাঁদের পরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, যা বিদেশের মাটিতে থেকেও সংস্কৃতির দীপ্তিকে বহন করে চলেছে।
ছবি: সংগৃহীত