পিয়া রায়
মেক্সিকোতে দুর্গাপূজোর আয়োজন যদিও তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক, এটি তাত্ত্বিক অবসান পায়নি—বরং প্রবাসী বাঙালি ও ভারতীয় সম্প্রদায়ের অটল সাংস্কৃতিক আবেগের নিদর্শন হিসেবে ফুটে উঠেছে। মেক্সিকোর গুয়াডালাহারায় আয়োজন করা হয় সাহসী প্রেক্ষাপটে একদিনব্যাপী দুর্গাপূজা, যেখানে স্থানীয় আর্টিস্ট, সংগঠন ও ভারতীয় দূতাবাস—সবাই মিলে এক মিলনময় উৎসব রূপায়ণ করেন।
২০১৬ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠিত এই আয়োজন শুরু হয়েছিল একটি অনুপ্রেরণামূলক পোস্টার দিয়ে। পরের বছর একটি ছোট মূর্তি স্থানীয় শিল্পীর মাধ্যমে নির্মিত হয়, আর এবারের মতো নতুন মূর্তি তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ হয়, যা থার্মোকল দিয়ে তৈরি এবং প্রতিটি উপাদান—দেবী, সিংহ, কার্ত্তিক ও অন্যান্য দেবগণ—বিভিন্ন অংশে আলাদাভাবে খোদাই করা হয়েছে। গ্লাসোবাস্ক অভিজ্ঞতা আনতে সহায়তা করেন স্থানীয় শিল্পী কন্টান্তিনো বেনার্দো।
পূজো অনুষ্ঠানে ঢাকের ছন্দ তুলে ধরতে একটি মেক্সিকান পার্কার, সাউল ক্রিশ্চিয়ান পাডিলা আলফারো, ইউটিউব থেকে শেখা ঢাকের তালে দোল তোলে—এ এমন এক দৃশ্য, যেখানে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান নতুন উৎসাহ ছড়িয়ে দেয়। মেয়েদের পাশাপাশি একজন পুরুষ পুরোহিত অঞ্জলী-আরতি এবং পুজোর আনুষ্ঠানিকতার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
মূলত একদিনব্যাপী হলেও, এই দুর্গাপূজো আয়োজন শুধু আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই আটকে নেই; এটি হয়ে ওঠে একটি “কালচরাল এক্সট্রাভাগা”—যেখানে মেক্সিকান শিল্পী, ইউটিউব-শিক্ষিত ঢাক বাজানো, স্থানীয় ভক্তদের উৎসাহ, ভারতীয় দূতাবাসের অংশীদারিত্ব— সব মিলিয়ে সূক্ষ্মভাবে উৎসবের রঙিন শৈলী ফুটে ওঠে। স্মরণীয়ভাবে, ভারতীয় দূতাবাস আয়োজনের এক-চতুর্থাংশ অর্থায়নে সহায়তা করে, যা নির্দেশ করে এই পুজোর স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা কতটা প্রাধান্য পেয়েছে।
এই উৎসব এমন এক জায়গায় আয়োজন করা হয় যা প্রমাণ করে—ভূগোল, সংস্কৃতি ও ধর্মের সীমানা যতই সীমাবদ্ধ হোক না কেন, মানবিক অনুভব, আবেগ ও ঐতিহ্য সবসময়ই পথ খুঁজে নেয়। মেক্সিকোর দুর্গাপূজা অতিরিক্ত মনোযোগ বা শাড়ি-পোঁড়ার ছোয়া নিয়েও নয়; বরং এটি হয়েছে এক আন্তঃসংস্কৃতিক সেতুবন্ধন—যেখানে একটি ক্ষুদ্র মূর্তির ছোঁয়ায়, ঢাক-ধ্বনিতে ও ভক্তির আবহে মেক্সিকান বাঙালি সম্প্রদায় নিজেদের শিকড়কে জীবন্ত রাখে এবং সুশৃঙ্খলতার সঙ্গে নতুন সংযোগ স্থাপন করে।
ছবি: সংগৃহীত

