পিয়া রায়
সৌদি আরবে দুর্গাপুজো আয়োজন করা অনেকটাই ভিন্ন এবং সীমিত আকারে হলেও এর গুরুত্ব কম নয়। দেশটির ইসলামী আইনভিত্তিক সামাজিক কাঠামো এবং ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণে প্রকাশ্যে পূজার আয়োজন করা সম্ভব নয়। তবুও এখানে কর্মসূত্রে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক ভারতীয় ও বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায় নিজেদের ধর্মীয় চর্চা চালিয়ে যেতে সচেষ্ট। বিশেষত রিয়াদ, জেদ্দাহ, দাম্মাম এবং আল খোবারে প্রবাসীদের মধ্যে দুর্গাপুজো ঘরোয়া পরিবেশে পালন করা হয়। অনেক সময় এটি ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্ট বা কমিউনিটি হাউজে গোপনে আয়োজিত হয়, যাতে আইনগত কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়।
এখানে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা হয় না। সাধারণত দেবী দুর্গার ছবি বা প্রতীকী রূপকে কেন্দ্র করে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টমী বা নবমীতে বিশেষভাবে উপবাস রাখা, সন্ধ্যায় আরতি, প্রার্থনা ও ভজন গাওয়া হয়ে থাকে। নারীরা শাড়ি পরে, পুরুষরা ধুতি বা প্রথাগত পোশাকে অংশ নেন, তবে সব কিছুই সীমিত পরিসরে সম্পন্ন হয়। ভোগের আয়োজনও করা হয়, যদিও পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশে যেরকম জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন দেখা যায়, এখানে তা সম্ভব নয়। খিচুড়ি, তরকারি, মিষ্টি প্রভৃতির ছোটখাটো ভোজসভা হলেও প্রবাসীদের কাছে তা এক অমূল্য স্মৃতি হয়ে ওঠে।
সৌদি আরবে দুর্গাপুজোর মূল লক্ষ্য ধর্মীয় আচার পালনের পাশাপাশি প্রবাসীদের মধ্যে আত্মিক শান্তি ও সামাজিক বন্ধন রক্ষা করা। পূজার দিনগুলোতে প্রবাসীরা একত্রিত হয়ে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করেন, মাতৃভূমির স্মৃতি মনে করেন এবং পরিবার থেকে দূরে থেকেও সাংস্কৃতিক পরিচয় ধরে রাখার চেষ্টা করেন। অনেক সময় পূজার খবর সীমিত পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিচিত মহল ছাড়া বাইরের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না, যাতে অযাচিত জটিলতা এড়ানো যায়।
যদিও প্রকাশ্যে প্রতিমা, প্যান্ডেল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ধুনুচি নাচের আয়োজন করা যায় না, তবুও সৌদি আরবের দুর্গাপুজো প্রবাসী হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে আত্মপরিচয় রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি তাদের মনে করিয়ে দেয় যে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও ভক্তি কখনও থেমে থাকে না। দেবী দুর্গার আরাধনার মধ্য দিয়ে তারা আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন জীবনের নানা সংকট থেকে মুক্তির জন্য এবং মানসিকভাবে শক্তি সঞ্চয় করেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, সৌদি আরবে দুর্গাপুজো জাঁকজমকপূর্ণ নয়, বরং গভীরভাবে ব্যক্তিগত ও সম্প্রদায়ভিত্তিক। ছোট পরিসরে হলেও এটি প্রবাসী হিন্দু সমাজের মধ্যে এক অসামান্য ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা ধর্মীয় ভক্তির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক শেকড় আঁকড়ে থাকার প্রমাণ বহন করে।
ছবি: সংগৃহীত

