রাজীব সিকদার
সম্প্রতি, সেপ্টেম্বর ২০২৫ এ মস্কোতে ব্রিকসের ১৫০ দেশের সিভিল সোসাইটি, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিজ্ঞানী ও মানবাধিকার কর্মী সহ বিশ্বের নানান প্রান্তের ৪০০০ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে নিয়ে ওয়ার্ল্ড পাবলিক অ্যাসেম্বলির আওয়াজ উঠেছে বিশ্বের ঐক্য, শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার। অন্যদিকে, এই সেপ্টেম্বরেই উত্তর কোরিয়া, চিন, ভিয়েতনাম, লাওস, নিকারাগুয়া, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা ও ল্যাটিন আমেরিকার সমস্ত দেশ সহ ৫০ টি দেশের বামপন্থী ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দলের উপস্থিতিতে বৈশ্বিক অসাম্য, পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এক জোট হওয়ার আহ্বান উপস্থাপিত হয়েছে।
ভূমধ্যসাগর তীরে প্যালেস্টাইনের গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধ থামাতে আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস জুড়ে ৪২ টি দেশের প্রায় ৫০০ জন মানবাধিকার কর্মী মানবতার আবেদন এক জোট হয়ে সুমুদ ফ্লটিলা অভিযানে সামিল হয়েছে এবং প্যালেস্টাইনের উপর ইজরায়েলের নির্মম আগ্রাসন ও হত্যালীলা বন্ধে সরব হয়েছে। ইজরায়েল পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।
আমেরিকায় ৫০ টি রাজ্যের ২৭০০ শহরে ৭ মিলিয়ন মানুষ সাম্রাজ্যবাদী ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। আওয়াজ উঠেছে ' নো কিংস ' অর্থাৎ কেউ রাজা নয়। পুনরায় আওয়াজ উঠেছে ঘৃণার রাজনীতি বন্ধ, বর্ণবিদ্বেষ ও নারী স্বাধীনতার পক্ষে।
বলা বাহুল্য, যে পুঁজিবাদ নিজেই নিজের মাথা ভাঙছে। সারা পৃথিবী জুড়ে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক ও সর্বহারা শ্রেণীর চাপে পুঁজিবাদ দিশাহারা । এখন আবার মাথা তৈরির চেষ্টায় আছে। কিন্তু, পুঁজির নিয়ম যা তাতে মাথা একবার ভাঙলে আর তৈরি অসম্ভব। এদিকে প্রচারমাধ্যম প্রযুক্তির দৌলতে রাষ্ট্রশক্তির সকল বাঁধনের গিট ঢিলে হয়ে এসেছে। আর শক্ত করার উপায় নেই। নিজের তৈরি নিজের রাষ্ট্রের বাঁধাধরা সীমানায় আপন চরিত্র বলে পুঁজিবাদ থাকতে নিমরাজি। তাই, শাসনের সকল সীমানা ভেঙেছে। নিজের তৈরি সংবিধান নিজে মানতেও পুঁজিবাদ নারাজ। কেননা, পুঁজিবাদ এমনই নিয়মের গেরোয় আটকে যেখানে ভোগ ও খবরদারির সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড রাখতে পারেনা। "চাই আরও চাই" নীতিই পুঁজিবাদের এই সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখনই ছেড়ে দে'মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা হয় তখনই পুঁজিবাদ সংকীর্ণ মানবতাবাদ কিম্বা সংকীর্ণ মানবাধিকার আইন বা ভুয়ো বিজ্ঞাপনী প্রচারমূলক নীতির দ্বারস্থ হয়। মানুষকে বিভ্রান্ত করার কুৎসিত কৌশল রপ্ত করে। যুদ্ধের রাজনীতিতে দুনিয়াকে আচ্ছন্ন করে। কিন্তু, এইসব কৌশল আর কাজ করছে না। বড়দার সব চালাকি ছোড়দারা ধরে ফেলেছে। তাই, এক মেরুর দ্বন্দ্ব রূপ পেয়েছে বহু মেরুতে। এই দ্বন্দ্বে বিশ্বের জনগণের অংশগ্রহণ অনেক সহজ হয়েছে। ঐক্য, শান্তি, সমঝোতা রক্ষা ও খবরদারি - শোষণ বন্ধের প্রশ্নও নিম্নস্তরে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
এবারে জাতীয় স্তর ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরেও পুঁজিবাদের ল্যাজে - গোবরে অবস্থা। তাই, মধ্যে মধ্যে সামাল দিতে মানবাধিকারের কথা বলে বর্তমান মৃতপ্রায় পুঁজিবাদ এখন সমাজতন্ত্রের তৈরি ম্যানেজমেন্টে পলিসি ধার নিয়ে নিজ অঙ্গের - তন্ত্রের প্লাস্টিক সার্জারি করে চলছে। একটা একটা অর্গান এরকম প্লাস্টিক সার্জারি করে শেষ পর্যন্ত পুঁজিবাদ বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদে দ্রবীভূত হতে বাধ্য এটা নিশ্চিত। তবে, অবশ্যই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক ও সর্বহারা শ্রেণীকে নিজ মর্যাদা ও আদর্শের জনমত তীব্র করে চাপ বহাল রাখতে হবে। ঘরে - বাইরে তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে পুঁজিবাদের সমস্ত ভুলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আওয়াজ। ধ্বনিত করতে হবে আন্তর্জাতিকতাবাদ তথা বিশ্ব মানবতার কন্ঠস্বর।

