পিয়া রায়
আজ World Letter Writing Day। প্রযুক্তির ঝড়ে যখন আমাদের জীবন মোবাইল স্ক্রিন আর ইন্টারনেটের তালে তালে ছুটছে, তখন এই দিনটি যেন মনে করিয়ে দেয় সেই পুরনো, কিন্তু অনন্য অভ্যাসের কথা—চিঠি লেখা। এক সময় চিঠিই ছিল ভালোবাসা, আবেগ, খোঁজখবর আর অপেক্ষার একমাত্র বাহন। ডাকপিয়নের সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গে কত হৃদয় কেঁপে উঠত, কত আশার আলো জ্বলে উঠত, তার সাক্ষী একসময় গোটা সমাজ।
চিঠি লেখার মধ্যে যে আবেগ, তা কোনও ডিজিটাল মেসেজের মধ্যে পাওয়া যায় না। কলমের আঁচড়ে লেখা প্রতিটি শব্দ পাঠকের কাছে লেখকের হৃদয়ের স্পন্দন পৌঁছে দেয়। প্রিয়জনের হাতের লেখা চিঠি হাতে পাওয়ার আনন্দ বা চিঠি ভাঁজ খুলে পড়ার মুহূর্তের উত্তেজনা যে অনুভূতি তৈরি করে, তার সঙ্গে কোনও ইমোজি বা হোয়াটসঅ্যাপ নোটিফিকেশনের তুলনা চলে না।
ভারতের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেও চিঠি এক বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে সুভাষচন্দ্র বসু—অসংখ্য মহামানব তাদের ভাবনা, আদর্শ, ভালোবাসা ও সংগ্রামের কথা চিঠির মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের কাছে। সেই সব চিঠি আজও ঐতিহাসিক দলিল হয়ে আছে, যা কেবল সম্পর্ক নয়, ইতিহাসও রচনা করেছে।
চিঠি লেখার শিক্ষামূলক মূল্যও অপরিসীম। এটি কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, ভাষা চর্চার এক অনন্য অনুশীলন। লেখার মাধ্যমে শব্দ বাছাই, ভাব প্রকাশ আর সংযম শিখে নেয় মানুষ। ছোটবেলায় স্কুলের পাঠ্যসূচিতে "বন্ধুকে চিঠি লেখো" বা "মায়ের কাছে খোঁজখবর জানিয়ে চিঠি লেখো"—এসব অনুশীলন শুধু লেখার দক্ষতা বাড়াত না, সম্পর্ককেও আরও দৃঢ় করত।
আজকের দিনে যদিও ই-মেল বা মেসেজিং অ্যাপ আমাদের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে, তবু হাতে লেখা চিঠির আবেদন কখনও ফিকে হয়নি। অনেকেই এখনো বিশেষ মুহূর্তে প্রিয়জনকে চিঠি লেখেন। আবার অনেকের কাছে এটি নস্টালজিয়ার এক ঝলক।
World Letter Writing Day তাই আমাদের শেখায়, কেবল দ্রুত যোগাযোগ নয়, বরং মনের গভীর অনুভূতি প্রকাশের জন্য চিঠি এখনো এক অসাধারণ মাধ্যম। হয়তো আজকের দিনে আমাদের সবার উচিত অন্তত একটি চিঠি লেখা—হাতে কলম তুলে নিয়ে কারো জন্য কয়েকটি আন্তরিক শব্দ সাজানো। হয়তো তাতে প্রযুক্তির যুগেও সম্পর্কের উষ্ণতা আবার ফিরে আসবে।
চিঠি মানে শুধু কয়েকটি বাক্য নয়, চিঠি মানে এক টুকরো হৃদয়ের প্রকাশ, এক অমূল্য স্মৃতি, যা সময় পেরিয়ে থেকেও যায় চিরকাল।