ছন্দা আচার্য
প্রতি বছর ২০ আগস্ট পালিত হয় World Mosquito Day, যা মূলত চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অনন্য আবিষ্কারকে স্মরণ করার দিন। ১৮৯৭ সালের এই দিনে ব্রিটিশ চিকিৎসক স্যার রোনাল্ড রস প্রমাণ করেছিলেন যে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে মশার দংশনের মাধ্যমে। এই আবিষ্কার শুধু চিকিৎসা জগতের পথপ্রদর্শকই নয়, মানবসভ্যতার জন্যও ছিল জীবন রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
মশা পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্র প্রাণী হলেও এর ভয়াবহতা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, জিকা ভাইরাসের মতো রোগে আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ম্যালেরিয়াতেই প্রতিবছর কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে, আর তার বড় অংশই শিশু। এ কারণেই মশাকে অনেক গবেষক পৃথিবীর সবচেয়ে ‘মারণ প্রাণী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
মশা নিয়ে গবেষণার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং পরিবেশ দূষণ মশার প্রজননকে সহজ করে তুলছে। বিশেষত শহরাঞ্চলে জমে থাকা পানি মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে কাজ করছে। এর ফলে ডেঙ্গুর মতো রোগ ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষায় মশা নিয়ন্ত্রণ এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
তবে আশার কথাও আছে। একদিকে যেমন বিজ্ঞানীরা মশা-বাহিত রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন, অন্যদিকে সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকতে হবে। ঘরে ও আশেপাশে পানি জমতে না দেওয়া, মশারি ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং নিয়মিত মশা নিধনের ব্যবস্থা করা—এসব অভ্যাস জীবন বাঁচাতে পারে। পাশাপাশি সরকার ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এই হুমকি মোকাবিলা করতে।
World Mosquito Day আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে একটি ক্ষুদ্র জীব কতো বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। একই সঙ্গে এটি বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার দিন, যারা মানবজীবন রক্ষায় নিরলস গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দিনটি আমাদের দায়িত্বশীল হতে শেখায়—কারণ মশা-বাহিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি আমরা সচেতন হই এবং সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেই।
আজকের দিনে তাই প্রয়োজন বৈশ্বিক সহযোগিতা ও ব্যক্তিগত সতর্কতা। মনে রাখতে হবে, মশা হয়তো ক্ষুদ্র, কিন্তু এর হুমকি বিশাল। আর এই হুমকিকে মোকাবিলা করা আমাদের হাতেই সম্ভব, যদি আমরা এখনই সতর্ক হই।