Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

বিশ্ব দরবারে দুর্গাপুজো: মাল্টা


পিয়া রায়

 

মধ্য ভূমধ্যসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টা—ছোট হলেও একটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির দেশ। প্রাচীন রোমান, আরব, ইতালীয় ও ব্রিটিশ প্রভাবের সংমিশ্রণে গঠিত এই দ্বীপপুঞ্জে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান হলেও, বহুজাতিক প্রবাসীদের আবাসস্থল হিসেবে এটি ধীরে ধীরে একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজে রূপ নিয়েছে। এই বৈচিত্র্যের ভেতরেই জন্ম নিয়েছে হিন্দু ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের একটি ক্ষুদ্র অথচ প্রাণবন্ত পরিসর—যার অন্যতম প্রতিফলন হলো দুর্গাপূজা।

বর্তমানে মাল্টায় প্রায় ৬,০০০-এরও বেশি ভারতীয় প্রবাসী বসবাস করেন, যাঁদের অনেকেই পেশাগত কারণে বা অভিবাসী কর্মী হিসেবে সেখানে রয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশই পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও দক্ষিণ ভারত থেকে আগত। এছাড়া বাংলাদেশ ও নেপাল থেকেও বহু হিন্দু কর্মী মাল্টায় কর্মরত। মাল্টার ধর্মীয় স্বাধীনতার আইনি কাঠামো অনুযায়ী, যদিও হিন্দু ধর্মকে সরকারিভাবে স্বীকৃত ধর্ম হিসেবে গণ্য করা হয় না, তবুও ব্যক্তি পর্যায়ে ধর্মাচরণে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

২০১৭ সাল থেকে মাল্টায় দুর্গাপূজার প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের সূত্রপাত ঘটে। স্থানীয় হিন্দু প্রবাসী সমাজের কিছু উদ্যোগী সদস্যের প্রচেষ্টায় ভালেটা, স্লিয়েমা এবং সান গওয়ান অঞ্চলে দুর্গাপূজার আয়োজন শুরু হয়। প্রথমদিকে এটি ছিল নিছক ব্যক্তিগত আয়োজন, কিন্তু সময়ের সঙ্গে তা একটি সাংগঠনিক রূপ পায়।

এই পূজাগুলো সাধারণত কোনও ভাড়া করা কমিউনিটি হল, হিন্দু সংগঠনের ক্লাবঘর অথবা কোনও ভারতীয় দোকানের বড় ঘর ব্যবহার করে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিমা সাধারণত কলকাতা থেকে ছোট মাটির বা ফাইবার মূর্তি আনা হয়, অথবা কিছু ক্ষেত্রে পোস্টার বা রঙিন ফ্লেক্সের মাধ্যমে দেবীমূর্তি স্থাপন করা হয়। পূজা হয় নিয়মমাফিক: ঘটস্থাপন, চণ্ডীপাঠ, অঞ্জলি, সন্ধিপূজা ও আরতি।

মাল্টার প্রশাসন ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করে না, যদি তা শান্তিপূর্ণ ও সামাজিক শৃঙ্খলার বাইরে না যায়। মাল্টার খ্রিস্টান সমাজও এসব হিন্দু উৎসবকে কৌতূহল ও সৌহার্দ্যের চোখে দেখে। কিছু স্থানীয় বাসিন্দা, এমনকি মাল্টিজ ক্যাথলিকরাও আমন্ত্রিত হয়ে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। এটি মাল্টার ধর্মীয় সহনশীলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

দুর্গাপূজা মাল্টায় কেবল ধর্মীয় আচরণ নয়, বরং প্রবাসীদের মাঝে ঐক্য, স্মৃতি ও শিকড়ের বন্ধন বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পূজার সঙ্গে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেমন—নাচ, গান, কবিতা পাঠ ও শিশুদের নাটিকা। এইসব আয়োজন মাল্টার প্রবাসী সমাজে উৎসাহের সঞ্চার করে এবং নব প্রজন্মের মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির বীজ রোপণ করে।

মাল্টার দুর্গাপূজা নিঃসন্দেহে এক অনন্য নজির—যেখানে ছোট একটি দ্বীপরাষ্ট্রে হিন্দু ধর্মের মহিমা ও বিশ্বাস গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়। এটি প্রমাণ করে যে, পূজো শুধু মণ্ডপ ও আয়োজনের বাহারে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের নীরব প্রকাশ। ইউরোপের ঠিক মাঝখানে মাল্টার মতো একটি দেশেও যখন ‘জয় মা দুর্গা’ ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়, তখন বোঝা যায়—সংস্কৃতি কখনোই সীমান্তে বন্দি থাকে না।

ছবি: সংগৃহীত 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon