Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

বিশ্ব দরবারে দুর্গাপুজো: লেবানন


পিয়া রায়

 

মধ্যপ্রাচ্যের উপকূলবর্তী রাষ্ট্র লেবানন, ঐতিহাসিকভাবে বহু ধর্ম ও সংস্কৃতির সহাবস্থানের প্রতীক। খ্রিস্টান, মুসলমান ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এখানে নানা অভিবাসী সম্প্রদায় বছরের পর বছর ধরে বসবাস করছে। সেই প্রেক্ষাপটে, একটি প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে—লেবাননে কি দুর্গাপূজা হয়? যদি হয়, তা কীভাবে, কারা পালন করেন, আর সমাজ তা কীভাবে গ্রহণ করে?

লেবাননের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সমর্থন করে এবং এখানে কোনও একক রাষ্ট্রধর্ম নেই। দেশটির জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ খ্রিস্টান, যার ফলে ধর্মীয় সহনশীলতা এখানে তুলনামূলকভাবে বেশি। ভারত, বাংলাদেশ এবং নেপাল থেকে আগত অভিবাসী কর্মীরা লেবাননে বসবাস ও কর্মরত রয়েছেন বহু বছর ধরে। এর মধ্যে ভারতীয় ও নেপালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি ছোট্ট গোষ্ঠী রয়েছে, যারা নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতি পালন করে থাকেন।

এই প্রবাসী হিন্দুদের উদ্যোগে লেবাননের রাজধানী বৈরুতসহ কয়েকটি শহরে দুর্গাপূজা সীমিত আকারে হলেও পালিত হয়। সাধারণত কোনো ভারতীয় দূতাবাস-ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্মীদের সংগঠন, অথবা কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফ্ল্যাট, রেস্টহাউস কিংবা ছোট মন্দিরজাতীয় স্থানে দুর্গাপূজা হয়। এখানে বিশাল প্রতিমা বা প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা না থাকলেও, দেবী দুর্গার কাগজে প্রিন্ট করা চিত্র বা ছোট মাটির মূর্তি দিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে পূজা হয়।

লেবাননের সমাজ দুর্গাপূজার মতো হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন নয়। বরং, এটি একটি বহুসাংস্কৃতিক সমাজ হওয়ায়, স্থানীয় লেবানিজ নাগরিকরাও মাঝে মাঝে কৌতূহলবশত পূজাস্থলে অতিথি হিসেবে হাজির হন। বিশেষত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব পোষণ করেন।

দুর্গাপূজা শুধু আধ্যাত্মিকতার অনুশীলন নয়, বরং প্রবাসী বাঙালি ও হিন্দুদের মাঝে সামাজিক সংযোগের একটি বড় উপলক্ষ। বৈরুত ও ত্রিপোলিতে কয়েকটি সংস্কৃতি-কেন্দ্রিক সংগঠন বছরে একবার এই পূজার আয়োজন করে, যেখানে পূজার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সিঁদুরখেলা, প্রসাদ বিতরণ এবং ভজন-সন্ধ্যার আয়োজন থাকে। এসব অনুষ্ঠান অভিবাসী সমাজের মধ্যে পরিচিতি ও ঐক্য গড়তে সহায়ক।

তবে পূজার আয়োজন লেবাননে এখনও সীমিত। আইনত কোনো বাধা না থাকলেও, আর্থিক অনুদানের অভাব, সংগঠনগত দুর্বলতা এবং মন্দিরের স্বল্পতা পূজার ব্যাপ্তিকে সীমিত রাখে। তবুও এই আয়োজন, ছোট হলেও, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির এক গভীর বহিঃপ্রকাশ। লেবাননে দুর্গাপূজা একটি প্রমাণ—ভৌগোলিক সীমা মানুষকে আটকাতে পারে, কিন্তু সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতা থেমে থাকে না।

অতএব, লেবাননে দুর্গাপূজা নিছক ধর্মীয় উৎসব নয়—এটি আত্মপরিচয়ের রক্ষাকবচ, প্রবাসে শিকড়ের খোঁজ। যা ছোট পরিসরে হলেও, হৃদয়ের গভীরে থেকে প্রকাশ পায় ভক্তি, ঐক্য ও আশার আলোয়।

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon