নরেন্দ্রনাথ কুলে
সংবিধানের ১৩০ তম সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হলে ভারতবর্ষে এক যুগান্তকারী আইন হবে বলে বিশেষজ্ঞমহল মনে করছেন । প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী সহ সংসদীয় জনপ্রতিনিধিগণ ফৌজদারি আইনে অভিযুক্ত হয়ে ত্রিশ দিন একটানা জেলবন্দী থাকলে এই আইন অনুযায়ী একত্রিশ দিনের মাথায় সংসদীয় পদ থেকে অপসারিত হবেন । রাজনীতিকে কলঙ্ক ও দুর্নীতিমুক্ত করতে এই পদক্ষেপের গুরুত্ব অপরিসীম হতে পারে বলে রাজনীতির মঞ্চে বিতর্ক তৈরি করেছে । রাজনীতিকে কলঙ্ক ও দুর্নীতি মুক্ত করতে জনপ্রতিনিধিদের জন্য যখন এই বিল আনতে হল, তখন প্রথমেই বলতে হয় সংসদীয় রাজনীতির প্রতিনিধিগণ তাঁদের clean image ধরে রাখতে হয় সক্ষম হচ্ছেন না, নয় কলঙ্কিত image নিয়ে রাজনীতিতে যোগদান করছে কিংবা ক্ষমতার কাছে এই image টা তাঁদের কাছে বড় ব্যাপার নয় । অবশ্য সকল প্রতিনিধির ক্ষেত্রে এ কথা বলা যায় না । তবে রাজনীতির ক্ষমতায় কলঙ্কিত image ঢেকে রাখার খেলা দেখা যায় না, এমনটি বলা যায় না ।
ইদানীং গণতান্ত্রিক ক্ষমতায় বিরোধীশূণ্য করার হুঙ্কার ও খেলা অচেনা নয় । বিরোধী রাজনীতিকে বেকায়দা ও আইনি প্যাঁচে ফেলার কৌশল-ক্ষমতা শাসকের সেই হুঙ্কারে থাকেই । ১৩০ তম সংশোধনী এই হুঙ্কারের সহযোগী হয়ে উঠবে না, তার নিশ্চয়তা আজকের রাজনীতি দিতে পারবে কি ?
সবথেকে আশ্চর্য বিষয় হল যে জনপ্রতিনিধিদের আদর্শ পথে চলতে আইন আনতে হচ্ছে । দেশ ও জনতার সেবক হিসেবে অবতীর্ণ প্রতিনিধি আইন থাকলে তবে আদর্শ পথে চলবে ? আজকের রাজনীতির চর্চা সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে । আইন থাকলেই সকলে ঠিক পথে চলবে তা নয় । আজকের সামাজিক পরিবেশও সে কথাই বলে । তবে জনপ্রতিনিধিগণ আদর্শহীন হলে তার দায় তাঁর একার নয় । তাঁর রাজনৈতিক দলের ও । রাজনীতি যদি আদর্শের চর্চা থেকে বিরত থাকে, তখন তার নেতা কর্মী আদর্শ রাজনীতির লোক হবে কি করে ? আজকের ভোট রাজনীতিতে জনপ্রতিনিধি মানেই রাজনীতির নিরলস চর্চার লোক হবে এমন নয় । তাহলে রাজনীতির চর্চার মধ্যেই আদর্শের অভাব থাকলে শুধু আইন দিয়ে কোথাও কলঙ্ক ও দুর্নীতিমুক্ত করা যাবে না ।
'দেশসেবা' কি- এ প্রশ্নে শরৎচন্দ্র একদিন বলেছিলেন,," দেশসেবা কথার কথা নয়। দেশসেবা মানবের শ্রেষ্ঠ সাধনা। স্বার্থ-গন্ধ থাকবে না, প্রাণের ভয় পর্যন্ত থাকবে না, একদিকে দেশসেবক নিজে, আর একদিকে তার দেশ, মাঝে আর কিছু থাকবে না। যশ, অর্থ, দুঃখ, পাপ, পূণ্য, ভাল, মন্দ সব যে দেশের জন্য বলি দিতে পারবে, দেশসেবা তার দ্বারাই হবে।" আর কবিগুরু বলেছিলেনন, 'যে লোক দেশের প্রত্যেক লোকের মধ্যে সমগ্র দেশকে দেখিতে পায় না, সে মুখে যাহাই বলুক দেশকে যথার্থ ভাবে দেখে না ।' আজকের রাজনীতি এবং জনপ্রতিনিধিগণ শরৎচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের এই কথায় গর্ব করতে পারেন কি ? দেশসেবা র অর্থ বলতে জনপ্রতিনিধিগণ শরৎচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের এমন কথা বাদ দিয়ে যদি ভাবেন, বোঝেন তাহলে আইন আইনেই থাকবে ।