বিয়ার ব্রাউন
অনুবাদ: পিয়া রায়
আজকের যুগে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কাজ থেকে বিনোদন, শিক্ষা থেকে যোগাযোগ—প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে অসীম সম্ভাবনা। তবে এই সুবিধার পাশাপাশি এসেছে কিছু চ্যালেঞ্জও। ঘন্টার পর ঘন্টা পর্দার সামনে কাটানো, অনবরত নোটিফিকেশন, ভার্চুয়াল প্রতিযোগিতা কিংবা অতিরিক্ত তথ্যের চাপ আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ইন্টারনেট সেল্ফ-কেয়ার ডে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভার্চুয়াল দুনিয়ার সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি।
ইন্টারনেট সেল্ফ-কেয়ার মানে শুধু ডিজিটাল ডিটক্স বা ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকা নয়, বরং এটিকে সচেতনভাবে ব্যবহার করার অভ্যাস তৈরি করা। যেমন—সময় বেঁধে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা, ঘুমের আগে স্ক্রিন এড়িয়ে চলা, অতিরিক্ত খবর বা নেতিবাচক কনটেন্ট থেকে দূরে থাকা এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য বাছাই করে পড়া। এসব ছোটখাটো অভ্যাস আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, মনোযোগ বাড়ায় এবং জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখে।
মানুষ এখন ক্রমেই বুঝতে পারছে যে ডিজিটাল জগতের চাপ অজান্তেই বাস্তব জীবনের সম্পর্ক ও আবেগকে প্রভাবিত করছে। অতএব ইন্টারনেট সেল্ফ-কেয়ার ডে কেবল একটি প্রতীকী উপলক্ষ নয়, বরং আমাদের নিজেদের সুস্থতার জন্য জরুরি এক আহ্বান। এই দিনে আমরা যদি নিজের জন্য কিছু সীমানা তৈরি করতে পারি, যেমন কর্মক্ষেত্রের ইমেইল রাতের পর না দেখা, পরিবারের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সময় কাটানো, কিংবা শুধু নিজের চিন্তাগুলো সাজানোর জন্য কিছুটা সময় অফলাইনে থাকা—তাহলেই ডিজিটাল জীবনে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
এছাড়াও ডিজিটাল স্বাস্থ্য রক্ষার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শারীরিক যত্ন। দীর্ঘক্ষণ বসে স্ক্রল করার অভ্যাস শরীরে নানা সমস্যার জন্ম দেয়। তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর শরীর নড়াচড়া করা, চোখকে বিশ্রাম দেওয়া এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখাও ইন্টারনেট সেল্ফ-কেয়ারের অংশ। মানসিক সুস্থতার জন্য ধ্যান, বই পড়া বা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
আজকের দিনে যখন তথ্যপ্রবাহ এত দ্রুত, তখন নিজের মানসিক শান্তি রক্ষার দায়িত্বও আমাদেরই। মনে রাখা দরকার, ইন্টারনেট হলো আমাদের হাতিয়ার, আমরা তার নয়। সচেতনভাবে ব্যবহার করলে এটি আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারে, অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আমাদের অস্থির করে তুলতে পারে। তাই ইন্টারনেট সেল্ফ-কেয়ার ডে হলো এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক—ডিজিটাল বিশ্বে থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এবং প্রযুক্তির সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
এই দিনে প্রতিজ্ঞা হোক, আমরা ইন্টারনেটকে এমনভাবে ব্যবহার করব, যা আমাদের সুস্থতা, সম্পর্ক ও আত্মউন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। কেবল তখনই ডিজিটাল দুনিয়া আমাদের আশীর্বাদ হয়ে উঠবে, অভিশাপ নয়।