Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

ক্ষুদিরামের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে...

নরেন্দ্রনাথ  কুলে

সন্ত্রাসবাদীদের হাতে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট খুন হয়েছেন এমন তিনজনের নাম লেখ বলে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে একটু হইচই হয়েছে । ইতিহাসে এ দেশে ব্রিটিশের কাছে বিপ্লবীরা সন্ত্রাসবাদী বলে পরিচিত ছিলেন । কিন্তু আজকের স্বাধীনতার সাতাত্তর বছর পরে ইতিহাসে ব্রিটিশের ভাষাকে মান্যতা দেব কেন ? এ প্রশ্ন ইতিহাসবিদ থেকে বিশিষ্ট মানুষজন তাঁদের ভিন্ন মত পোষণ করতেই পারেন । কিন্তু আমাদের প্রজন্মের কাছে আমাদের দেশের বিপ্লবীদের শুধু সন্ত্রাসবাদী বলে এখনও পাঠ্যসূচিতে পরিচয় দেওয়ার প্রবণতা কেন ? ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগ দিবসে সেই কথাই আবারো মনে করিয়ে দেয় ।
যত সময় গেছে । বিশেষ করে স্বাধীনতার পরে ক্ষুদিরামের সেই আত্মত্যাগের গরিমা যতটা বাড়ার কথা, তা না হয়ে ক্রমশঃ-তা ফিকে হয়েছে । স্বাধীনোত্তর বাঙালিকেও ক্ষুদিরামের নাম জঘন্যভাবে ব্যঙ্গাত্মক ইঙ্গিতে কথা বলতে শোনা যায় । আসলে ক্ষুদিরাম যে ধারায় স্বাধীনতা লাভের সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন সেই ধারা ব্রিটিশের কাছে ভয়ঙ্কর ছিল । তাই ব্রিটিশ সরকারের কাছে ক্ষুদিরাম সন্ত্রাসবাদী ছিল । আর সেই কথাটাই তদানীন্তন ও স্বাধীনোত্তর কংগ্রেসের নেতারা তাই বিশ্বাস করেছেন । আসলে জনমানসে বিপ্লবীদের ডাকাত বলে একটা প্রচার ব্রিটিশরা চালাতো সবসময় । স্বদেশী ডাকাত বলেও প্রচার করা হয়েছে । এই প্রচারে তদানীন্তন আপোষকামী নেতারা নিজেদের বাঁচিয়ে চলেছেন । তাই ক্ষুদিরাম সন্ত্রাসবাদী বলে ব্রিটিশের কথাকেই মান্যতা দিয়েছে । স্বাধীনতার পর প্রথম প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদিরাম সন্ত্রাসবাদী বলে মজফফরপুরে তাঁর আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করার কথা দিয়েও শেষমুহূর্তে অসম্মত হয়েছেন । ক্ষুদিরামের প্রতি সেই অবমাননা এখনো বয়ে চলেছে । কখনো পাঠ্যসূচিতে । কখনো কোনো সাংস্কৃতিক মাধ্যমের পরিচয়ে । আসলে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস শাসক যদি নিজের মত করে রচনা করে তার ফল প্রজন্মের কাছে প্রকৃত ইতিহাস মুছে যাওয়াটাই স্বাভাবিক । শাসক-যে ইতিহাস নিজের মত করে রচনা করেছে তা ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের লেখা থেকে জানা যায় । '১৯৫২ সালে যখন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ' স্বাধীনতা ইতিহাস ' লেখার জন্য একটি সম্পাদক মন্ডলী নিযুক্ত করে আমাকে তার ডিরেক্টর পদে নিয়োগ করেন, তখনও আমি বিপ্লববাদের ইতিহাস লেখার জন্য জীবিত বিপ্লবী নায়কদের কাহিনী সংগ্রহ করার প্রস্তাব করি । কিন্তু কোন একটি বিশিষ্ট দলের নায়ক ছাড়া আর কারও কাহিনী সংগ্রহ করা হয় না । এর কারণস্বরূপ বলা হয়েছিল যে, বিভিন্ন লোকের কাহিনী সংগ্রহ করলে তাতে গোলোযোগ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে । আমি এর উত্তরে বলেছিলাম, এইরূপ বিভিন্ন কাহিনী একত্র করলেই তা থেকে বিপ্লবের প্রকৃত ইতিহাস সংগ্রহ করা সম্ভব হবে । কিন্তু এ যুক্তি গ্রাহ্য হয়নি ।' আজও কিন্তু ইতিহাস নিয়ে সরকারের নির্দেশ প্রতিপালিত হচ্ছে । আজকের জাতীয় ও রাজ্য শিক্ষানীতি সেই নির্দেশের বাইরে নয় । এমনকি আজকের শিক্ষানীতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থা রাজনীতিকরণের বলিষ্ঠ শিকার ।
এ দেশের প্রকৃত ইতিহাস ও বিপ্লবের ইতিহাস মুছে দেওয়ার জন্য যে প্রয়াস সেই ইতিহাসও প্রজন্মকে ভুলিয়ে দিতে চায় । অতীত থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের রূপরেখা যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যাতে জানতে না পারে এটাই তার উদ্দেশ্য । 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: