সোমনাথ চৌধুরী :
এই শ্রবণে আমরা প্রায় বেশিরভাগ মহিলাদের হাতে পড়তে দেখি সবুজ চুড়ি ।কেন পড়া হয় এই সবুজ চুড়ি জানেন! মূলত পাঁচটি দিক রয়েছে এই সবুজ চুড়ি পড়ার পেছনে।
আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা :
শিব ও পার্বতীকে শ্রাবণ মাসে বিশেষভাবে পূজা করা হয়। পার্বতী মাতা বরাবরই সবুজের প্রতীক—উর্বরতা, মাতৃত্ব ও শক্তির দেবী হিসেবে। বিবাহিত মহিলারা সবুজ চুড়ি পরে দেবীর আশীর্বাদ কামনা করেন, যাতে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখী হয়, সন্তান-সন্ততি সুখী ও সুস্থ থাকে।
ঋতুভিত্তিক কারণ :
শ্রাবণ মাস মানেই বর্ষা ঋতু। চারপাশে নতুন ঘাস, গাছপালা, ফসল সবুজে ভরে যায়। সেই সবুজের সঙ্গে মিলিয়ে মহিলারা সবুজ চুড়ি, সবুজ শাড়ি বা ওড়না পরে প্রকৃতির সৌন্দর্য আর নবজীবনকে বরণ করে নেন।
শারীরিক ও মানসিক প্রভাব :
লোকবিশ্বাস আছে, সবুজ রঙ মনকে শান্ত রাখে ও রাগ কমায়। বর্ষাকালে আবহাওয়া আর্দ্র ও মেঘলা থাকে—সবুজ রঙের উপস্থিতি মনে এক ধরনের সতেজতা আনে।
আঞ্চলিক রীতি :
মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক ইত্যাদি রাজ্যে “হরিয়ালী তীজ” বা “মঙ্গলা গৌরী” ব্রত পালন করা হয়, যেখানে মহিলারা সবুজ চুড়ি পরে নাচ, গান ও পুজো করেন।
পশ্চিমবঙ্গে অনেক জায়গায় শ্রাবণ সোমবার ব্রত থাকে; শিবকে দুধ, বেলপাতা নিবেদন করা হয়, আর বিবাহিত মহিলারা সবুজ চুড়ি পরে ব্রত পালন করেন।
উত্তর ভারতে সবুজ চুড়ির সঙ্গে সবুজ মেহেদি পরাও জরুরি অংশ, যা সৌভাগ্যের প্রতীক।
লোককথা :
একটি জনপ্রিয় কাহিনি আছে—পার্বতী মাতা কঠোর তপস্যা করে শ্রাবণ মাসে শিবকে স্বামী হিসেবে পেয়েছিলেন। সেই কারণে মহিলারা বিশ্বাস করেন, এই মাসে সবুজ চুড়ি ও ব্রত পালন করলে স্বামীকে দীর্ঘায়ু ও ভালোবাসা পাওয়া যায়।
সব মিলিয়ে এই প্রথা শুধু সৌন্দর্য নয়—এর মধ্যে প্রকৃতি, ভক্তি, মনোবিজ্ঞান আর সামাজিক সংস্কৃতির এক সুন্দর মেলবন্ধন রয়েছে।