যোগমায়া আচার্য :
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট শহর, প্রশাসনিক গুরুত্বে যতই উজ্জ্বল হোক, বাস্তব অভিজ্ঞতায় বহু মানুষের কপালে ভাঁজ ফেলছে। জেলা সদর হওয়া সত্ত্বেও এখানকার স্বাস্থ্য পরিষেবা ও পরিবহন ব্যবস্থার দুরবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায়। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষজন, রোগীর পরিজন বা দপ্তর-কাজে আসা সাধারণ নাগরিকেরা নানা অসুবিধার সম্মুখীন হন।
বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল এখানকার একমাত্র বড় সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র হলেও, পরিকাঠামোগত ঘাটতি রয়ে গেছে বহুদিন ধরেই। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কম, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, নার্সিং স্টাফের ঘাটতি এবং দীর্ঘ লাইনের চাপ একাধিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। রোগীদের বড় অংশকেই বাইরে পাঠানো হয়, যা আর্থিক ও মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে।
পরিবহন ব্যবস্থার চিত্রও খুব আশাব্যঞ্জক নয়। শহরের ভেতরে এবং বাইরের সঙ্গে যাতায়াতকারী গণপরিবহনের সংখ্যা কম, রেলস্টেশন বা হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে যানবাহনের অভাব দেখা যায় প্রায়শই। বিকল্প হিসেবে যে টোটো বা রিকশা পরিষেবা আছে, সেটিও নিয়মিত নয় বা প্রায়ই অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে।
এই সমস্ত সমস্যার মধ্যে একটি দিকই যেন বালুরঘাটের মুখরক্ষা করে—তা হল এখানকার খাবার। স্বল্পমূল্যে সুস্বাদু ও পরিমাণে পর্যাপ্ত খাবার এখানে সহজলভ্য। বাইরে থেকে আগত বহু মানুষই জানান, খাবারের স্বাদ ও পরিষেবায় তাঁরা সত্যিই সন্তুষ্ট।
একটি সাধারণ হোটেলে মাত্র ৬০ টাকায় ১০-১২টি পদে নিরামিষ আহার মেলে—এই তথ্যই অনেকের চোখ কপালে তুলতে যথেষ্ট। অথচ এখানকার হোটেল বা খাবারের দোকানগুলো তা দৈনন্দিনভাবেই সম্ভব করে তুলেছে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, আন্তরিক ব্যবহার এবং খাবারের গুণমান—সব মিলিয়ে রীতিমতো প্রশংসাযোগ্য।
শুধু রেস্তোরাঁ নয়, ছোট ছোট খাবারের দোকান বা চায়ের দোকানেও নজরে পড়ে মানুষের জন্য সহজপাচ্য ও কমদামি খাবারের ব্যবস্থা। এতে করে দিনমজুর, রোগীর পরিবার বা পথচলতি সাধারণ মানুষ সহজেই পেট ভরাতে পারেন, যা বড় শহরে প্রায় কল্পনাতীত।
বালুরঘাটের এই আন্তরিক খাদ্যসংস্কৃতি শহরের অন্য সমস্যাগুলির পাশে এক অনন্য ব্যতিক্রম তৈরি করেছে। এ শহর হয়তো এখনও স্বাস্থ্য ও পরিবহনে উন্নয়নের মুখ দেখেনি, কিন্তু খাবারের মাধ্যমে ‘আপ্যায়ন’ শব্দটির প্রকৃত মানে এখনও ধরে রেখেছে।