সোমনাথ চৌধুরী :
SIR প্রসঙ্গে বিজেপি বলছে সাফাই হচ্ছে ,কংগ্রেস বলছে জবাই হচ্ছে গণতন্ত্র সাথে রাজ্যের শাসক দল বলছে ভয়ংকর ষড়যন্ত্র ।এসআইআর (Special Intensive Revision) যা আপাতত রাজ্য রাজনীতির মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে ।কারা প্রকৃত ভোটার, কাদের নাম থাকবে তালিকায় তা নির্ধারণ হবে কমিশন নির্ধারিত ১১ টি নথির ভিত্তিতে ।SIR - এর গোটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ,কমিশনের তরফে ব্যাখা দেওয়ার পরেও থামছে না সেই বিতর্ক ।
SIR (শ্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) বা বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা কী :
নির্দিষ্ট সময়ান্তরে জাতীয় নির্বাচন কমিশন এই নিবিড় সমীক্ষা করে থাকে ।দেশের রাজা গুলিতে শেষবার এই সমীক্ষা হয়েছিল ২০০২ - ২০০৪ সালের মধ্যে, পশ্চিমবঙ্গে শেষবার নিবিড় সমীক্ষা হয়েছিল ২০০২ সালে।নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত ভোটার তালিকায় থাকা নামের তালিকার মধ্যে কারা মৃত, কারা অন্যত্র চলে গিয়েছে ও কারা ভুয়ো তা গভীরে গিয়ে সমীক্ষা চালায় নির্বাচন কমিশন ।তারপরেই নির্বাচন কমিশন তৈরী করে সংশোধিত ভোটার তালিকা ।
কী কী নথির প্রয়োজন নিজের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রাখার জন্য :
ভোটার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভূক্ত রাখার জন্য নির্বাচন কমিশন ১১ টি নথি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে ,সেগুলি হল...
১,আপনি কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কর্মচারী বা অবসর প্রাপ্ত কর্মচারী হলে আপনার সেই পরিচয় পত্র।
২,আপনার নামে ১৯৮৭ সালের ১লা জুলাইয়ের আগের কোনো সরকারি (কেন্দ্র অথবা রাজ্য) নথি। এছাড়াও ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস সহ এলাইসির (LIC) নথি গ্রাহ্য।
৩.জন্মের শংসাপত্র।
৪.বৈধ পাসপোর্ট ।
৫.যে কোনো বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া শিক্ষা সংক্রান্ত শংসাপত্র (যেখানে জন্মের সাল বা তারিখ উল্লেখ রয়েছে) ।
৬. সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থায়ী বসবাসকারীর শংসাপত্র ।
৭. তফশিলি জাতি বা উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর জাতির হলে তার শংসাপত্র।
৮. জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (NRC) তালিকায় নাম।
৯. বনাঞ্চলে অধিকারের শংসাপত্র ।
১০. রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের তৈরী করা পারিবারিক "রেজিস্টার" ।
১১. সরকার প্রদত্ত জমি বা বাড়ির নথি ( দলিল ও পর্চা ইত্যাদি)
জানিয়ে রাখি , বয়স্কদের জন্য শুধুমাত্র ২২০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই আর দেখাতে হবে না কোনও নথি। যাদের ২০০২ সালের পর ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে তাদের ক্ষেত্রে দেখাতে হবে ১১ টি নথির মধ্যে যে কোনো একটি সাথে পরিবারের প্রধান অথবা অভিভাবকের নাম হয় ২০০২ সালের ভোটার তালিকায দেখাতে হবে নচেৎ দেখাতে হবে জন্মের সাল বা তারিখ উল্লেখ রয়েছে এমন শংসাপত্র।
এবার উঠছে কত গুলো প্রশ্ন?
প্রশ্ন : কাদের কোনো নথি দেখাতে হবে না?
উত্তর : যাদের ২০০২ সালের ভোটর তালিকায় নাম রয়েছে তাদের কোনো নথি দেখানোর প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন :জন্মের শংসাপত্র না দেখাতে পরলে কী ভোটার তালিকা থেকে নাম বাতিল পড়বে?
উত্তর : জন্মের শংসাপত্র ছাড়াও আরও ১০ টি নথির উল্লেখ রয়েছে ,যা আপনি ভোটার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভূক্তিকরনে দেখাতে পারবেন।
প্রশ্ন : ১৯৮৭ সালের পর জন্ম হলে বাবা ও মায়ের শংসাপত্র দেখাতেই হবে?
উত্তর : না তেমনটি না ।যদি বাবা মায়ের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকলে তা দিয়েও আপনি প্রমান করতে পারবেন ।
প্রশ্ন : ভোটার তালিকায় যদি নাম না থাকে তাহলে কী দেশের নাগরিক নয়?
উত্তর : কয়েক দিন আগেই নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে ,ভোটার তালিকা থেকে নাম বাতিল হয়ে যায় সেক্ষেত্রে তার নাগরিকত্ব যাবে না ।সে দেশের নাগরিক হিসেবেই বিবেচিত হবেন ।
জনসাধারণের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি ,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বারবার তুলে ধরা হচ্ছে বিহারে ৫৬ লক্ষ নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, বিষয়টি তেমন না। নির্বাচন কমিশন পদত্ত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে ,বাদ পড়া ৫৬ লক্ষ ভোটারের মধ্যে সাড়ে ২১ লক্ষ মৃত এবং অন্যত্র চলে গিয়েছেন ৩১ লক্ষ ভোটার। ১.৫ লক্ষ এমন নামের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যাদের একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে ।