পাঠক মিত্র
এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আপোষকামী আর আপোষহীন এই দুটি ধারার কথা অজানা নয় । আপোষহীন ধারার কথা উঠলেই প্রথমে 'অনুশীলন সমিতি' র কথা আসে । যে সমিতির সদস্যদের কয়েকটি ধাপে কঠিন পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ দিতে হত । এরকমই এক সদস্যের জন্মশতবর্ষ অতিক্রান্ত। এ বছর তাঁর মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর (5th August)। কিশোর বয়সেই অনুশীলন সমিতির সদস্য হিসেবে যাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত । স্বাধীনতা লাভের কয়েক বছর আগে ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন এবং কারারুদ্ধ হন । উন্নত সংস্কৃতি, হৃদয়বৃত্তি, জীবন সংগ্রাম এবং মার্ক্সবাদী বিজ্ঞান ও বিচারধারা অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তিনি ওই বয়সেই স্বাধীনতা আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি গভীরভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হন । তখনই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, দেশের সংগ্রামী জনগণের অপরিসীম ত্যাগ, তিতিক্ষা, যন্ত্রণাভোগ, অসংখ্য শহিদের আত্মবলিদানের বিনিময়ে আসন্ন স্বাধীনতা কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতাই অর্জিত হবে, সেখানে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্ত দিক থেকে জনগণের আকাঙ্কিত মুক্তি অর্জন সম্ভব হবে না । অতঃপর দেশের স্বাধীনতা লাভ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সর্বপ্রকার শোষণ থেকে জনগণের মুক্তি ঘটেনি । তাই স্বাধীনতা অর্জনের পর একদিকে যেমন আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে, অন্যদিকে এই স্বাধীনতার প্রতিফলন সম্পর্কে তিনি আহ্বান করেছেন 'গণমুক্তি সংকল্প দিবস' পালন করার ।
এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আপোষকামী আর আপোষহীন এই দুটি ধারার কথা অজানা নয় । আপোষহীন ধারার কথা উঠলেই প্রথমে 'অনুশীলন সমিতি' র কথা আসে । যে সমিতির সদস্যদের কয়েকটি ধাপে কঠিন পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ দিতে হত । এরকমই এক সদস্যের জন্মশতবর্ষ অতিক্রান্ত। এ বছর তাঁর মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর (5th August)। কিশোর বয়সেই অনুশীলন সমিতির সদস্য হিসেবে যাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত । স্বাধীনতা লাভের কয়েক বছর আগে ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন এবং কারারুদ্ধ হন । উন্নত সংস্কৃতি, হৃদয়বৃত্তি, জীবন সংগ্রাম এবং মার্ক্সবাদী বিজ্ঞান ও বিচারধারা অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তিনি ওই বয়সেই স্বাধীনতা আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি গভীরভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হন । তখনই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, দেশের সংগ্রামী জনগণের অপরিসীম ত্যাগ, তিতিক্ষা, যন্ত্রণাভোগ, অসংখ্য শহিদের আত্মবলিদানের বিনিময়ে আসন্ন স্বাধীনতা কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতাই অর্জিত হবে, সেখানে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্ত দিক থেকে জনগণের আকাঙ্কিত মুক্তি অর্জন সম্ভব হবে না । অতঃপর দেশের স্বাধীনতা লাভ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সর্বপ্রকার শোষণ থেকে জনগণের মুক্তি ঘটেনি । তাই স্বাধীনতা অর্জনের পর একদিকে যেমন আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে, অন্যদিকে এই স্বাধীনতার প্রতিফলন সম্পর্কে তিনি আহ্বান করেছেন 'গণমুক্তি সংকল্প দিবস' পালন করার ।
গণমুক্তির সংকল্প নিয়ে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি এক অনন্যসাধারণ ও ঐতিহাসিক সংগ্রামে লিপ্ত হন । তাঁর সেই সংগ্রামের ভিত্তি মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের শিক্ষার গভীর উপলব্ধি । মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের শিক্ষা থেকে তিনি বুঝেছিলেন, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম চাই একটি সত্যিকারের কমিউনিস্ট দল । তদানীন্তন এ দেশে যে-সমস্ত কমিউনিস্ট দল ছিল, সেই দলগুলোর প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও দলগুলোর কোনোটাই কমিউনিস্ট দল হিসেবে গড়ে ওঠেনি বলে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন । কিন্তু তাঁর এই উপলব্ধি ঠিকানাহীন, সহায় সম্বলহীন অনামী এক মানুষের পক্ষে কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন মানুষদের বোঝানোর চেষ্টা করা যেমন কঠিন, তার থেকেও আরো কঠিন মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ সহ এ দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট মার্ক্সবাদী উপলব্ধি গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে এক সঠিক কমিউনিস্ট দল গড়ে তোলার সংগ্রাম । প্রাক স্বাধীনতা ও পরবর্তী সময়ে এ দেশে কম্যুনিস্ট আন্দোলনের নানা ঘটনাবলী ধরে দেখিয়েছেন যে তাঁদের মূল রাজনৈতিক তত্ত্বের মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য নেই । অমার্ক্সবাদী চিন্তাধারা ও বিচারধারায় তাঁদের সংগ্রামের কৌশলগত ও শব্দগত পার্থক্য ছাড়া আর কিছু নেই। এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরে সাম্যবাদী আন্দোলন সম্পর্কে তিনিই প্রথম দেখিয়েছেন, 'আধুনিক সংশোধনবাদ ও সংস্কারবাদই বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের সামনে প্রধান বিপদ ।'
তিনি বলেছিলেন, 'কোন একটি পার্টি আদর্শের বড় বড় কথা বলছে কিনা, সেটা বড় কথা নয় । তাদের আদর্শ সত্যিই বড় কিনা, তার একটি বড় প্রমান হচ্ছে তাদের নেতা, কর্মী ও সমর্থকবৃন্দ ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিদিনের ব্যবহারে ও রাজনৈতিক আচার-আচরণে উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির মান প্রতিফলিত করছেন কিনা ।' তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ে বলতেন, 'যে কোনও আদর্শের মর্মবস্তু নিহিত থাকে তার উন্নত সংস্কৃতিগত মানের মধ্যে । তাই কমিউনিস্ট আদর্শের কথা যাঁরা বলবেন, তাঁরা নিজের জীবনে তা প্রয়োগ করবেন, তার উন্নত সাংস্কৃতিক মানকে জীবনে ধারণ করবেন ।' তিনি তাই বলতে পেরেছেন, বিপ্লবী রাজনীতি একটি উচ্চতর হৃদয়বৃত্তি । এমন উন্নত সাংস্কৃতিক মান নিয়েই গুটিকয়েক সাথীকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন এস ইউ সি আই । তিনি হলেন শিবদাস ঘোষ । তাঁর এই শিক্ষার ভিত্তিতে এস ইউ সি আই দলে নেতা কর্মীবৃন্দ আজ জনসাধারণের সমর্থন ও ভালবাসা পাচ্ছেন । শুধু তাই নয়, উন্নত সংস্কৃতির এই শিক্ষা নিয়ে এই দল মার্ক্সবাদ লেনিনবাদ তথা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে বলে তারা দাবি করে । সেই দাবি প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে শিবদাস ঘোষের শিক্ষায় মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ চর্চা তাঁরা নিয়মিত করে চলেছে । সেই চর্চার কেন্দ্র হিসেবে অধুনা ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলায় 'শিবদাস ঘোষ স্টাডি সেন্টার' গড়ে তুলেছে । সারা দেশ বিদেশ থেকে শিবদাস ঘোষের শিক্ষায় মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ চর্চায় দলীয় কর্মীরা নিয়মিত ক্লাস করতে আসে । এছাড়াও এ দলের কর্মীরা তাঁদের কমরেডদের বাড়িতে বাড়িতে কিংবা তাঁদের দলীয় অফিসে নিয়মিত মার্কসবাদ-লেনিনবাদ চর্চার লক্ষ্য নিয়ে নিয়মিত স্টাডি সার্কেলের আয়োজন করে । ভোটের হিসেবে এই দল শূণ্য হলেও আদর্শের ভিতে তাদের কর্মীরা এগিয়ে চলেছে, লড়াই করছে । যে কোন জনবিরোধী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রথমেই এই দলকে পথে নেমে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় । এমন কর্মসূচী জনগণের শ্রদ্ধা অর্জন করেছে এই দল । কিন্তু কেবল ভোটের স্বার্থে এই দলের লড়াইয়ের কথা খুঁজে পাওয়া যায় না ।
আজকের রুচিহীন সুবিধাবাদী রাজনৈতিক পরিবেশে শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারায় তাঁর দেখানো পথেই কোটি কোটি শোষিত-নিপীড়িত মানুষ একদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে বলে এই দলের নেতাকর্মীদের অটুট বিশ্বাস ।
তাঁদের দলের প্রতিষ্ঠাতা এই নেতার চিন্তাধারার চর্চায় উন্নত রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মান জনসাধারণের মধ্যে গড়ে তোলার প্রয়াসে তাঁর মৃত্যুর অর্ধ শতবর্ষ উদযাপনে দলের কর্মীরা ব্যস্ত । সেই ব্যস্ততা কেবল আনুষ্ঠানিক নাকি আগামীদিনে তাঁদের নেতার চিন্তাধারায় মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ চর্চায় মানুষের জন্য লড়াই করে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারবেন মানুষকে লড়াইয়ের সাথী করে নিতে পারবেন, তা সময় বলবে ।