যোগমায়া আচার্য
বন্ধুত্ব—একটি শব্দ, যার মধ্যে লুকিয়ে থাকে মানবিক সম্পর্কের সবচেয়ে নিখাদ, নির্মল ও অমূল্য অনুভূতি। প্রেম-ভালোবাসা কিংবা রক্তের সম্পর্ক অনেকসময় শর্তসাপেক্ষ হলেও বন্ধুত্ব নিঃস্বার্থ, নিঃশর্ত ও সাদামাটা। আর এই সম্পর্কেরই এক অফিশিয়াল উদ্যাপন হলো Friendship Day বা বন্ধুতা দিবস—যা ভারতে প্রতিবছর আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার উদ্যাপিত হয়। এই বিশেষ দিনটি বন্ধুদের জন্য শুধু কিছু মুহূর্ত নয়, বরং একটি উপলক্ষ যা ভালোবাসা, আস্থা, হাসি, কান্না, স্মৃতি আর প্রতিশ্রুতির রঙে সাজিয়ে তোলে আমাদের জীবন।
ভারতীয় সমাজে বন্ধুত্বের গুরুত্ব বরাবরই ব্যতিক্রমী। প্রাচীন মহাকাব্য ‘মহাভারত’-এর কৃষ্ণ ও সুদামার বন্ধুত্ব হোক, অথবা আধুনিক সময়ের জয়-ভীরু কিংবা রান্চো-ফারহান-রাজুদের বন্ধুত্ব—ভারতীয় সংস্কৃতিতে বন্ধুত্ব সর্বদাই বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আজকের এই দিনে বন্ধুরা একে অপরকে কার্ড, উপহার, ফুল, ব্রেসলেট দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্বের স্মৃতিগুলো শেয়ার হয়, নানা হ্যাশট্যাগে ভেসে যায় বন্ধুদের মুহূর্তের ছবি ও আবেগঘন বার্তা।
Friendship Day কেবলমাত্র উপহার বা পার্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এমন এক সময়, যখন আমরা ফিরে তাকাই, আমাদের জীবনের সেই মানুষগুলোর দিকে, যাঁরা পাশে থেকেছে চুপিসারে, শক্তি জুগিয়েছে নিঃশব্দে, হাসিয়েছে অকৃত্রিমভাবে। এটা সেই বন্ধুর গল্প, যে মায়ের মতো স্নেহ দিয়েছে, বাবার মতো সাহস জুগিয়েছে বা ভাইয়ের মতো রক্ষা করেছে। বন্ধু কখনও পরামর্শদাতা, কখনও অবলম্বন, কখনও সহযাত্রী—এই দিবসটি সেই অবদানেরই স্বীকৃতি।
বর্তমান যুগে, যেখানে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সম্পর্ক অনেক সময় কৃত্রিমতায় ভরে যায়, সেখানে বন্ধুত্বই পারে মানুষকে মানুষ করে তুলতে। এই বিশেষ দিনটি তাই শুধুই আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং জীবনের মূল্যবান সম্পর্কগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন। বন্ধুদের জন্য একটি ছোট বার্তা, একটা ফোন কল বা হঠাৎ দেখা করাই হতে পারে হাজার শব্দের চেয়েও বেশি অর্থবহ।
Friendship Day একটি স্মরণ করিয়ে দেয়ার দিন—আমরা একা নই। জীবনের চড়াই-উতরাইয়ে যেসব বন্ধু আমাদের পাশে থেকেছে, সেইসব সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের দিনটি হোক আরও অর্থবহ, আরও হৃদয়ছোঁয়া।
বন্ধুত্বের এই দিনে, প্রতিটি বন্ধুকে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। বন্ধুত্ব হোক আজীবনের, সময়ের চেয়ে বড়, দূরত্বের ঊর্ধ্বে।