ছন্দা আচার্য
প্রতি বছরের ১২ আগস্ট পালিত হয় আন্তর্জাতিক যুব দিবস। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ এই দিনটিকে ঘোষণা করেছিল বিশ্বব্যাপী যুবসমাজের সম্ভাবনা, অধিকার ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। এই দিনের মূল বার্তা হলো—যুবসমাজ কেবল দেশের ভবিষ্যৎ নয়, তারা বর্তমানের পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।
বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ১৬ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। এই বিশাল অংশের মানুষের মেধা, উদ্যম এবং সৃজনশীলতাই একটি জাতির উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে তোলে। প্রযুক্তি, শিক্ষা, উদ্যোক্তা উদ্যোগ, পরিবেশ সুরক্ষা, মানবাধিকার—সবক্ষেত্রেই তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা অপরিসীম। তারা শুধু পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে না, বরং তা বাস্তবায়নের সাহসও রাখে।
বর্তমান বিশ্বে যুবসমাজ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বেকারত্ব, শিক্ষার অসম সুযোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সামাজিক বৈষম্য এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সংকট তাদের অগ্রগতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে এই সমস্যাগুলোই অনেক যুবক-যুবতীকে নতুন সমাধানের পথ খুঁজতে অনুপ্রাণিত করছে। সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন শিক্ষা এবং বিশ্বায়নের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা এখন বৈশ্বিক মঞ্চে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলতে পারছে।
আন্তর্জাতিক যুব দিবসের মূল তাৎপর্য হলো তরুণদের ক্ষমতায়ন। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন, সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সুযোগের সমতা—এগুলো নিশ্চিত হলে তারা কেবল নিজেদের নয়, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে কাজ করতে সক্ষম হবে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রামীণ এলাকায় ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার, স্টার্টআপের জন্য অর্থায়ন, এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে তরুণ উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ—সবই ইতিবাচক পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত।
তরুণদের স্বপ্ন, উদ্যম এবং সৃজনশীলতাকে দমন না করে এগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত করাই সমাজের দায়িত্ব। প্রতিটি প্রজন্মের হাতে ভবিষ্যতের হাল তুলে দেওয়া হয়, কিন্তু যুবসমাজের হাতে তা পৌঁছানোর মুহূর্তটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আজকের তরুণদের হাতে বিশ্বকে আরও ন্যায়সঙ্গত, সবুজ ও শান্তিপূর্ণ করে তোলার ক্ষমতা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক যুব দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যুবশক্তি অবহেলার নয়—তারা আগামী বিশ্বের নির্মাতা, পরিবর্তনের দূত, আর আশার আলো। এখনই সময় তাদের প্রতি আস্থা রাখা এবং স্বপ্ন দেখার স্বাধীনতা দেওয়া।