নরেন্দ্রনাথ কুলে
শ্মশানে শ্মশানে ঘুরেও মৃতদেহ সৎকার করতে পারেনি মৃতের আত্মীয়স্বজন । মৃতের ও তাঁর পরিবারের দোষ তাঁরা বাঙালি তাঁরা বাংলায় কথা বলে । সূদর পথ পাড়ি দিয়ে বাংলায় মৃতের গ্রামেই তাঁর পরিবারকে সৎকার ক্রিয়া করতে হল। এই ঘটনা কোন বিজেপি শাসিত রাজ্যে নয় । সম্প্রতি তামিলনাড়ুর এই ঘটনা বলে দিচ্ছে বাঙালি বিদ্বেষ আজ আর বিজেপি শাসিত রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বাঙালি বিদ্বেষ জাতীয় স্তরে বিজেপি এমন প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে পেরেছে যে মৃত বাঙালিরও মর্যাদা নেই। এই ঘটনা এখন আর কোন ছোট ঘটনা বলাই যায় না । বিজেপির বাঙালি নেতৃবৃন্দ এই ঘটনার জন্য কোন অনুশোচনা করতে পারছেন কিনা তার বহিঃপ্রকাশ নেই। বাংলা ও বাঙালি মানে বাংলাদেশি বলে প্রচারে বিজেপির সার্থকতা রাজনৈতিক স্তরে ঠিক কোন পর্যায়ে আজ বাংলা ও বাঙালির কাছে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা কিন্তু শুধু ভোট রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয় নয় । বিজেপির রাজ্যে বাঙালি আক্রান্ত হচ্ছে, আর বাংলার তৃণমূল সরকার তাঁদের উদ্ধার করছে বলে তাতে ভোটের ইস্যু তৈরি হতে পারে । কিন্তু তাতে বাঙালির হেনস্থা আটকানো যাবে সে ভরসা থাকে না । এমনকি বাংলার বুকে কলকাতা শহরেই বাঙালিরও আক্রান্তের সংবাদ সেই বিষয় তুলে ধরেছে । কলকাতা শহর সংস্কৃতির শহর হিসেবে যে গর্ব এবং খ্যাতি আছে তা যে হারিয়ে যাচ্ছে এমন সংবাদ তা বলে দিচ্ছে ।
বিজেপি রাম-রাজনীতি থেকে হিন্দু-মুসলমান রাজনীতি নিয়ে যেভাবে এগিয়ে এসেছে সেই অগ্রসর পথেই অনুপ্রবেশের নামে বাঙালি বিদ্বেষকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। 'এক দেশ এক ভাষা', 'এক দেশ এক আইন', 'এক দেশ এক ভোট' বিষয়ে বিজেপির রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার আড়ালে দেশে ঐক্যের নামে মানুষের ঐক্য ভাঙার পথকে ত্বরান্বিত করছে । 'ভারতমাতা' ধ্বনি দিয়ে প্রাদেশিক ও আঞ্চলিক বিভেদকে উস্কে দিতে পেরেছে । সেই বিভেদের প্রথম টার্গেট আজ বাংলা ও বাঙালি । এর বিরুদ্ধে বাঙালি কেবল ভোটের হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াইয়ের অংশীদার হলে ভবিষ্যতের সমাধান হবে না । এই লড়াই বাংলার বুকে বাঙালি ও অবাঙালির বিভেদের ইন্ধন তৈরি যাতে না করে সেদিকে সচেতন থাকতে হবে বাঙালিদের । বাঙালির সংকট বিজেপির ভোটের হাতিয়ার হলে কখনোই তা কোন সমাধান তারা করবে বলে এই সংকট তৈরি করেনি । বাংলার সংস্কৃতি বিভেদকামী নয় । তবে বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ কতটা বাঙালিকে সচেতন রাখতে পারবে তা কিন্তু সময় বলবে ।