নরেন্দ্রনাথ কুলে
যুদ্ধ ইতিহাস পড়ে এখন জানতে হয় না । কারণ যুদ্ধ চলছে অবিরত । ইতিহাসের পাতায় যুদ্ধ সীমাবদ্ধ থাক আজকের পৃথিবীর পরিবেশে তার কোন আন্তরিক চেষ্টার উদাহরণ দেওয়া যায় না । চেষ্টার যেটুকু উদাহরণ তা শুধু শব্দের ব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয় । আমেরিকা, রাশিয়া, ইজরায়েল--বর্তমান সময়ে যুদ্ধবাজ হিসেবে সারা পৃথিবীর মানুষ তাদের জানে । গাজা ও ইউক্রেনের শিশুসহ মৃত্যমিছিল, ধ্বংসস্তুপ, মানুষের অসহায়তা পৃথিবীর মানুষ কাঁদছে । অথচ রাষ্ট্রের সংখ্যাতীত রাষ্ট্র নিরুত্তাপ। এখন যুদ্ধ ও যুদ্ধের ছায়ায় আবার পারমাণবিক শব্দের মেঘ ভেসে বেড়ায় ।
যুদ্ধ ইতিহাস পড়ে এখন জানতে হয় না । কারণ যুদ্ধ চলছে অবিরত । ইতিহাসের পাতায় যুদ্ধ সীমাবদ্ধ থাক আজকের পৃথিবীর পরিবেশে তার কোন আন্তরিক চেষ্টার উদাহরণ দেওয়া যায় না । চেষ্টার যেটুকু উদাহরণ তা শুধু শব্দের ব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয় । আমেরিকা, রাশিয়া, ইজরায়েল--বর্তমান সময়ে যুদ্ধবাজ হিসেবে সারা পৃথিবীর মানুষ তাদের জানে । গাজা ও ইউক্রেনের শিশুসহ মৃত্যমিছিল, ধ্বংসস্তুপ, মানুষের অসহায়তা পৃথিবীর মানুষ কাঁদছে । অথচ রাষ্ট্রের সংখ্যাতীত রাষ্ট্র নিরুত্তাপ। এখন যুদ্ধ ও যুদ্ধের ছায়ায় আবার পারমাণবিক শব্দের মেঘ ভেসে বেড়ায় ।
পারমাণবিক শব্দের মধ্যে মানবিক শব্দ আছে, অথচ মানবিকতার আদৌ কোন অর্থ বহন করে না । তাতে কি যায় আসে । ধ্বংস করার জন্য ক্ষমতা যার বেশি সেই তো ক্ষমতাধর । পারমাণবিক যুদ্ধের হুঙ্কার সেই ক্ষমতাধরের চরিত্র এতটুকুও বদলায়নি । আমেরিকা ও রাশিয়ার পরস্পরের প্রতি সাম্প্রতিক হুঙ্কার সেই দিকেই নির্দেশ করে । এই আমেরিকা আশি বছর আগে পারমাণবিক বোমা দিয়ে ধ্বংস করেছিল জাপানের দুটো শহর । সাড়ে তিন লাখ মানুষের মধ্যে এক লাখ চল্লিশ হাজার মানুষ মারা যায় একটি শহরে, আর একটি শহরে মারা যায় বাহাত্তর হাজার । মানুষ পোড়ার গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে গিয়েছিল সেদিন । তারপর নেমেছিল কালো বৃষ্টি । পরমাণুর বিকিরণ আড়াই থেকে পাঁচ কিমি ব্যাসার্ধের থাকা মানুষদের তৎক্ষণাৎ শুধু ঝলসে দেয়নি, সেই বিকিরণ বেঁচে থাকা প্রজন্মকে পঙ্গু করে দিয়েছিল । 1945 সালের 6 আগস্ট হিরোশিমা আর 9 আগস্ট নাগাসাকিতে এমন ধ্বংসলীলায় শেষ হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও যুদ্ধ শেষ হতে পারে না । এ সম্পর্কে বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার কথা স্মরণ করা যায়, 'বর্তমানে শুধুমাত্র বৃহৎ জাতিগুলি পারমাণবিক জ্বালানি, কলাকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যার একচেটিয়া অধিকারী এবং এগুলি সম্পর্কে গোপনীয়তা অবলম্বন করে এসেছে । এটা কি নতুন ধরনের সাম্রাজ্যবাদ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ভীতি প্রদর্শন নয়-- যাকে আমরা অনুন্নত দেশগুলির উপর পারমাণবিক সাম্রাজ্যবাদ বলতে পারি? ....আন্তর্জাতিক উত্তেজনা ও ঠান্ডা লড়াই এখনও চলছে এবং গোটা বিশ্বে ত্রাস সৃৃষ্টি করছে ।'
বিজ্ঞানী সাহা যুদ্ধ নিয়ে যে গোপনীয়তার কথা বলেছিলেন সেই গোগনীয়তার কণামাত্র এখন আর নেই । যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি চলছে খোলাখুলিভাবে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি লাভে । সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তিত চেহারায় এই স্বার্থসিদ্ধির পিছনে যদিও কোনো দেশের মানুষের স্বার্থসিদ্ধি হয় না, কেবল যুদ্ধ নিয়ে উত্তেজনার আড়ালে দেশে দেশে চলা এই ঠান্ডা লড়াইয়ে ফুটে উঠছে কে কাকে ত্রাস সৃষ্টি করে দমিয়ে রাখতে পারে । ইজরায়েল আর রাশিয়া তা দেখিয়ে দিচ্ছে । আমেরিকা কলকাঠি নাড়ছে ।
তাহলে হিরোশিমা ও নাগাসাকির ধ্বংস থেকে আশি বছর পরেও স্মৃতির অনুতাপে যুুুদ্ধ কেবল স্মৃৃৃতিতে বেঁচে নেই। দেশে দেশে যুদ্ধের হুঙ্কার এমনকি পারমাণবিক শক্তির প্রদর্শন আজ মানব সভ্যতা ধ্বংসের পক্ষেই কথা বলে । ধ্বংস করার ক্ষমতা যার যত, সেই দেশ যদি তত উন্নত হয় তাহলে যুদ্ধের জয়গানে মানব সভ্যতার জয়গান হতে পারে কি ?

