সাতসকাল নিউজ :
গ্যাংটক ও উত্তর সিকিমে কয়েকদিন ধরে অব্যাহত ভারী বর্ষণের ফলে একের পর এক ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ি ধসের কারণে বহু সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, ভেঙে পড়েছে অবকাঠামো, এবং স্বাভাবিক জনজীবন কার্যত থমকে গেছে। দক্ষিণ সিকিমের মাজওয়া গ্রামে ভূমিধসে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, ধসে গিয়েছে একাধিক বসতবাড়ি। অন্যদিকে, লিঙ্গি–সিংটাম জাতীয় মহাসড়কে একটি ট্যাক্সির উপর বড় পাথর ধসে পড়ে একজন নিহত হয়েছেন।
পর্যটন-নির্ভর এই পাহাড়ি রাজ্যে দুর্যোগের প্রভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। লাচেন, লাচুং ও চুংথাং এলাকা থেকে প্রায় ১,৬০০ পর্যটককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হলেও এখনও শতাধিক পর্যটক পাহাড়ি ধসের কারণে আটকে আছেন। প্রশাসন জানিয়েছে, আগের ধসের ক্ষতি এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি; এর মধ্যেই নতুন ধস ও বৃষ্টিপাত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। লাচেন ও লাচুং এলাকায় এখনও প্রায় ১,৮০০ পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।
পরিবহন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত জাতীয় সড়ক ১০ (NH-10) সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ধসে বা প্লাবিত হয়ে যাতায়াত অচল হয়ে পড়েছে, ফলে সিকিমের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। গ্যাংটক শহরের জল সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে—ভূমিধসে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাজার হাজার বাসিন্দা ও পর্যটক তীব্র জলসংকটে ভুগছেন।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) সিকিমে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে। তিস্তা নদীর জলস্তর দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে মাঙ্গান, উত্তর সিকিম, দক্ষিণ সিকিম এবং গ্যাংটক জেলা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (DDMA) এবং সীমান্ত সড়ক সংস্থা (BRO) যৌথভাবে উদ্ধার ও পুনর্গঠন অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ছয়টি ব্লক সড়ক আংশিকভাবে পরিষ্কার করে বহু পর্যটককে গ্যাংটকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন জরুরি বৈঠক করে উদ্ধার, আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার পরিকল্পনা করছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি মাটির দুর্বলতার কারণে ভবিষ্যতেও ভূমিধসের ঝুঁকি বহাল থাকবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অপ্রয়োজনীয় বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং পর্যটকদের আপাতত উত্তর সিকিমমুখী ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধারকাজ ও ক্ষয়ক্ষতির পুনর্গঠন কার্যক্রম সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্যেই চলবে।