ছন্দা আচার্য
প্রতিবছর ১৮ জুন পালিত হয় আন্তর্জাতিক আতঙ্ক দিবস বা প্যানিক ডে— যে দিনটি আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা ও মানসিক অস্থিরতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন ও সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করে। আধুনিক জীবন যে মানসিক চাপ ও অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ, সেখানে আতঙ্ক ও মানসিক অস্থিরতা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে— ঠিক সেই বাস্তবতাই প্রকাশিত হয় এই বিশেষ দিনটিতে।
আতঙ্ক হলো শরীর ও মনের একটা স্বাভাবিক প্রকাশ— যে মুহূর্তে হঠাৎ বিপদ বা অস্থিরতা ঘনিয়ে আসে, তখন শরীর অ্যাড্রেনালিন ছেড়ে দিয়ে আত্মরক্ষার প্রস্তুতি নেয়। এটা অনেক ক্ষেত্রে উপকারী হলেও, ঘন ঘন ও অযাচিত আতঙ্ক বা প্যানিক অ্যাটাক মানসিক সুস্থতা ও জীবনযাত্রায় গভীর ও সুদূরপ্রসারিত প্রভাব ফেলতে পারে। প্যানিক অ্যাটাকের সময় হৃদ্কম্পন বাড়তে পারে, ঘাম ঝরতে পারে, নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে ও মনে হতে পারে যে মৃত্যুই ঘনিয়ে এসেছে— যা আত্মবিশ্বাস ও স্বাভাবিকতা অনেকটাই হ্রাস করে দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন যে আতঙ্ককে দমন বা অগ্রাহ্য না করে তা প্রকাশ ও গ্রহণ করাই সুস্থ মানসিক জীবনের পথ। আত্মবিশ্বাস ও মানসিক সুস্থতা আবারও ফিরে পেতে চাইলে বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা, থেরাপিতে অংশ নেওয়া বা ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন অনেক উপকার দিতে পারে। প্যানিক অ্যাটাক বা আতঙ্কজনিত অসুবিধা কারো দুর্বলতা প্রকাশ করে না— বরং এটা একটা মানসিক চ্যালেঞ্জ যা উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় কাটিয়ে ওঠা যায়।
সমাজে আতঙ্ক সম্পর্কে ভুল বিশ্বাস রয়েছে অনেক— যেমন আতঙ্ক মানে দুর্বলতা বা অস্থিরতা, যা কলঙ্কিত বা অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু বাস্তবে আতঙ্ক হলো মানসিক চাপের একটা প্রকাশ— ঠিক যেমন শরীর অসুস্হ হলে ওষুধ ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। মানসিক অস্থিরতাও ঠিক তাই— এরও চাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও ভালোবাসা, বোঝা ও সমর্থন।
আন্তর্জাতিক আতঙ্ক দিবস সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে আতঙ্ক একটা সাধারণ ও স্বাভাবিক মানসিক অভিজ্ঞতা, যা যে কারো হতে পারে— অপরাধ বা কলঙ্ক হিসেবে না দেখে বরং সহানুভূতি ও ভালোবাসার সাথে এর মোকাবিলা করাই উচিত। সবাই চাইলে অপরজনের দুর্বল মুহূর্তে পাশে থাকতে পারে, কথা বললে ও সমর্থন জানালে অনেকটাই হ্রাস পেতে পারে মানসিক যন্ত্রণা।
আজ প্যানিক ডে’তে সবাইকে অনুরোধ— মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুত্ব দিন, অপরজনের দুর্বল মুহূর্তে হাত বাড়ান ও ভালোবাসা প্রকাশ করুন। আতঙ্ককে স্বীকৃতি ও মোকাবিলা করাই সুস্থ ও সুন্দর জীবনের পথ। মনে রাখুন, দুর্বলতা প্রকাশ করাই হলো মানসিক শক্তির প্রকাশ— এবং সবাই মিলে সেই শক্তিতে আলোকিত হতে পারি।