Select language to read news in your own language

ডিজিটাল ক্লান্তি: কেন আধুনিক তরুণেরা ইন্টারনেটবিহীন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখছে?


যোগমায়া আচার্য

 

একবিংশ শতাব্দীর তরুণ প্রজন্মকে আমরা সাধারণত "ডিজিটাল নেটিভ" হিসেবে চিনি—যারা ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পরিচালিত একটি সমীক্ষা আমাদের এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে।

ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ডস ইনস্টিটিউশন (BSI) পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৬ থেকে ২১ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক (৪৬%) এমন এক পৃথিবীতে বাস করতে চায় যেখানে ইন্টারনেটের অস্তিত্বই নেই। এই ফলাফল আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করে—তরুণদের মধ্যে ইন্টারনেটের প্রতি এমন বিরূপ মনোভাবের কারণ কী?

ইন্টারনেটের প্রতি বিরূপতা: কারণসমূহ

  1. সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব: সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ৭০% তরুণ জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের পর তারা নিজেদের সম্পর্কে খারাপ অনুভব করেন। সুন্দর জীবনযাপন, শরীরের গঠন, এবং সামাজিক সাফল্যের অবাস্তব মানদণ্ড তরুণদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ হ্রাস করছে।

  1. মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি: ৬৮% তরুণ মনে করেন, অতিরিক্ত অনলাইন সময় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময় অনলাইন উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।
  1. গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি: সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪২% তরুণ তাদের অনলাইন কার্যকলাপ সম্পর্কে অভিভাবকদের মিথ্যা বলেছেন, এবং ২৭% অন্য কারো পরিচয়ে অনলাইনে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, ৪০% তরুণ "বার্নার" বা গোপন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন। এই তথ্যগুলো ইন্টারনেটে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিয়ে তরুণদের উদ্বেগের প্রতিফলন।
  1. ডিজিটাল ক্লান্তি ও আসক্তি: প্রতিদিন চার ঘণ্টা বা তার বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করছেন এমন তরুণদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এই অতিরিক্ত ব্যবহার তাদের মধ্যে ক্লান্তি, একাকীত্ব এবং বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি সৃষ্টি করছে।

সমাধানের পথ: তরুণদের প্রস্তাবনা

  1. ডিজিটাল কারফিউ: ৫০% তরুণ রাতে ১০টার পর নির্দিষ্ট অ্যাপ ও সাইটে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের মতে, এটি ডিজিটাল আসক্তি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  1. বয়সভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ: অনেক তরুণ মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য কঠোর বয়সভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। তারা চান, শিশু ও কিশোরদের জন্য নিরাপদ ও কম আসক্তিকর ডিজিটাল পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।
  1. অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা: তরুণরা চান, অভিভাবকরা তাদের অনলাইন জীবনের প্রতি সচেতন হোন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করুন। এছাড়া, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

উপসংহার:

এই সমীক্ষার ফলাফল আমাদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়—ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনে অপরিহার্য হলেও, এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে তরুণদের রক্ষা করতে হবে। তরুণদের কণ্ঠস্বর আমাদেরকে সচেতন করে তুলছে যে, প্রযুক্তির ব্যবহারে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি।

আমাদের সমাজ, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উচিত তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শুধুমাত্র প্রযুক্তির উন্নয়ন নয়, মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্যসূত্র: [1] British Standards Institution (BSI) সমীক্ষা, মে ২০২৫ [2] The Guardian প্রতিবেদন, ২০ মে ২০২৫ [3] NDTV প্রতিবেদন, ২০ মে ২০২৫ ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: