Select language to read news in your own language

নারী ধর্ষণকারী ও খুনির মৃত্যুদন্ডেও ধর্ষক ভীতিহীন 

নরেন্দ্রনাথ কুলে 


 

মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ায় এক নারীকে গণধর্ষণের পর ধর্ষণকারীরা তাঁকে পৈশাচিকভাবে খুন করেছে । এই ঘটনা দিল্লির নির্ভয়া কান্ডের প্রতিফলন । দিল্লির নির্ভয়াকান্ড সারা দেশকে আতঙ্কিত করেছিল । এমন ঘটনায় আতঙ্কিত মানুষ। এমন ঘটনা মানুষের কাছে এখন আতঙ্ক সৃষ্টি আর করবে না, যদি এমনতর ঘটনা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় । তখন মানুষকে সাময়িক নাড়া দিলেও তারপর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় । প্রতি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর যে প্রশ্নটা আসে তা হল নারীর নিরাপত্তার প্রশ্ন । নারীর নিরাপত্তা নিয়ে সেই প্রশ্ন কোন একটি অঞ্চল বা একটি রাজ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নির্ভয়াকান্ডের পর উন্নাওকান্ড, হায়দ্রাবাদকান্ড, হাথরাস কান্ড, মুম্বাই কান্ড চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, রাজ্যে রাজ্যে নারী নিরাপদ নয় । মধ্যপ্রদেশের এই ঘটনা সেই প্রশ্ন আবারো তুলে দেয় । আর বাংলায় বানতলা, শুঁটিয়া, কামদুনি, পার্কস্ট্রীটকান্ড ভুলে যায় নি মানুষ । 2020 সালের বর্ষবরণের রাতে ঘরের দরজা ভেঙে এই বাংলায় দত্তপুকুরে এক মহিলা গণধর্ষিতা হয়েছিলেন । আবার এই বাংলা হাঁসখালির ঘটনা দেখেছে । গত বছর আর জি কর ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে নারী তাঁর কর্মস্থলেও নিরাপদ নয় । নারী ও শিশু একলা পথে শুধু নিরাপদে থাকে না, বাড়ির মধ্যে, অফিসের মধ্যে থাকাও আজ আর নিরাপদ নয় । মৃত্যুদন্ড(কলকাতার পারেখ হত্যায় ধনঞ্জয়ের ফাঁসি), যাবজ্জীবন(সম্প্রতি উন্নাও কান্ডে কুলদীপ সিঙ্গারের শাস্তি), নির্ভয়া কান্ডেও মৃত্যদন্ড কোনো শাস্তিই ধর্ষণ নামক অপরাধ থেকে মানুষকে সংযত করতে পারছে না । 
 কিন্তু এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন ঘটছে ? নারী সুলভ বলে না দুর্লভ বলে । যদি দুর্লভ হত, তাহলে নারীকে নিয়ে কাড়াকাড়ি করে নিজের কাছে এমনভাবে যত্নে রেখে দিত যেমন মূল্যবান বস্তুকে রাখতে দেখা যায় । কিন্তু নারীকে নিয়ে তা ত দেখা যায় না । শরৎচন্দ্র বলেছেন 'মণি-মাণিক্য মহামূল্য বস্তু, কেন-না তাহা দুস্প্রাপ্য। এই হিসাবে নারীর মূল্য বেশী নয়, কারণ সংসারে ইনি দুষ্প্রাপ্য নহেন। জল জিনিসটি নিত্য প্রয়োজনীয়, অথচ ইহার দাম নাই। কিন্তু যদি কখনও ঐটির একান্ত অভাব হয়, তখন রাজাধিরাজও বোধ করি একফোঁটার জন্য মুকুটের শ্রেষ্ঠ রত্নটি খুলিয়া দিতে ইতস্ততঃ করেন না। তেমনি—ঈশ্বর না করুন,—যদি কোনদিন সংসারে নারী বিরল হইয়া উঠেন, সেইদিনই ইহার যথার্থ মূল্য কত, সে তর্কের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হইয়া যাইবে— আজ নহে। আজ ইনি সুলভ।' শরৎচন্দ্রের এ কথাটি ধরে আমরা আজ কি বলতে পারি, নিত্য প্রয়োজনীয় জলের মত নারী মূল্যহীন । কিন্তু জলের মূল্য আজকে যেরূপ বোঝা যাচ্ছে তা নারীর ক্ষেত্রে আমরা বুঝে উঠতে এখনো পারিনি । আসলে নারীকে পুরুষ নিজের মত করে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে, এমনকি ধর্মের যে কথাটা তার মত কেবল সেটাই মানে, আর যা তার মত নয় সেদিকে তার নজর থাকে না । বিদ্যাসাগর মহাশয় তা উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দিলেও সেদিনের সমাজ তাঁকে বিদ্রূপ করেছে । পুরুষ নিজের প্রয়োজনে নারীকে কখনো শক্তিদায়িনী, কখনো স্নেহময়ী, কখনো মমতাময়ী বলে ভূষিত করবে, আবার পান থেকে চুন খসলে তাকে কুলটা, বারাঙ্গনা, অসতী বলতে দ্বিধা করে না । এই সভ্য সমাজে শুধু ফর্মটা আলাদা । সভ্যতার অন্ধকারে নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তে একধরণের চোখ নারীশরীর ঝলসে দিতে চায় । রাস্তাঘাটে, কর্মস্থলে, পার্টি নামক আধুনিক অনুষ্ঠানে সর্বত্রই । সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির আধুনিকতার ফসল হিসেবে মানসিকতার গোপন কুঠুরিতে জ্বলতে থাকে কাম-লালসার টিমটিমে বাতি । কাম-লালসা চরিতার্থ করার জন্য নারীকে বশে আনতে না পারলে কেউ হিংস্র হয়ে উঠছে । যে কোন ক্ষমতাবানের একটা শ্রেণীর এই লালসা চরিতার্থ করার কৌশলে জুড়ে থাকে নানা ক্ষমতার শাখা প্রশাখা যা সমাজকে আরো কলুষিত করছে । ক্ষমতার স্পর্শে থাকা প্রকৃত দোষী যখন নির্দোষ থেকে যায় কিংবা দোষ লঘু হয়ে যায়, তখন অরাজকতা ও অনৈতিকতা সমাজের গভীরে প্রবেশ করে । দোষী সাধারণ মানুষকে বা সাজানো দোষীকে শাস্তি দিয়ে আইন আছে বলে জাহির করলে সমাজের শুদ্ধিকরণ হবে না । 
ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: