রাজীব সিকদার
দমন, দমন, দমন ! ....হত্যা, হত্যা, হত্যা ! কিন্তু, এবার কি হবে? হিংস্র পাশব প্রবৃত্তির উদগ্র , সীমাহীন ও ধারাবাহিক আস্ফালন যে বিশ্ব মানসে নুতন সকালের জন্ম দিয়েছে। এতদিন যা ছিল দার্শনিক, কবি , সাহিত্যিকদের কল্পনার গর্ভে । এখনও সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জোড়া লেগে গেলে। ব্যক্তি মনে , দেশে দেশে গড়ে ওঠা মানবতার বুদবুদ তো ভূমধ্যসাগরে ঢেউ হয়ে জানান দিল। শত ছিন্ন প্যালেস্টাইনের গাজার বুকে মানবতার প্রকাশ ঘটল বিশ্বমানবতা হয়ে।
যুদ্ধ, যুদ্ধাস্ত্র ও ক্ষমতার আস্ফালন ছাড়াই সব দেশ একসাথে নড়ে উঠলো, মানবাধিকার চেতনায় সৃষ্টি করলো বিশ্ব নাগরিকের একসুরের ধ্বনি - প্রতিধ্বনি। মানবতার বহুতরী ভিড়লো এক সাগরের তীরে। ধ্বনিত হল এক সুর। মানবতা আজ বাস্তবিকই বিশ্বমানবতার রূপ পেল গাজার বুকে। মানবতার এই মিলনক্ষেত্র বিশ্বমানবতা হয়ে যে ঐতিহাসিক ভাবেই এক নুতন যুগে পদার্পণ করেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। আর একে অলীক কল্পনা বলা চলে না।
যে চোখের জল ঈশ্বরকে ডাকতে বলে, সেই চোখের জলই বিশ্বমানবদের সাগরের এক তীরে জায়গা দিল। মিলে গেলো যীশু থেকে মহান মার্কসের ঈশ্বর সম্পর্কে সেই গভীরতম মানব অনুভূতি, মানব ধর্ম, অসহায়ের পাশে সহায়দের উপস্থিতি। যে মানবতা ছিল দেশীয়, তা আজ আন্তর্জাতিক রূপ পেল। মিলল মহম্মদ থেকে বুদ্ধ। রবীন্দ্রনাথ থেকে শরৎচন্দ্র। লিংকন থেকে লেনিন। এই তো আজকের অনুপ্রেরণা, আজকের আনন্দ। এই সত্য আর রুখবে কে ? ঘোচাবে কে ? এত রাষ্ট্রপুঞ্জের আরেক মেরু। মানবতার বহু মেরু এসেছে একমেরুতে, একসাথে, এক যোগে। আর এখান থেকে পিছু হটার উপায় নেই।
এই মিলনের বিপরীতেও কুৎসিত বর্বর সাম্রাজ্যবাদের বিষাক্ত গরল এখনো বুদবুদ কাটে, কেটে চলেছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, খলনায়ক হয়েও বিশ্বে নায়ক সাজবার কূটনীতি ও পোশাকের বাহারে তাঁরা এখনো নিজেদের রঞ্জিত করছে। ভোগ, খবরদারি, যেকোনো উপায়ে জনপ্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, বর্বরতা এখনো ট্রাম্প, নেতানিহাহুদের মজ্জায় মিশে আছে। আজ তারা নেমেছে বিশ্ব জনতাকে ঘোল খাওয়াতে। তাই তো এখনো সকাল, দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা ও রাত্রে পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক বিজ্ঞাপনে নুতন নুতন শব্দ, বাক্য, ঢংয়ের উপস্থাপনা। আবার বিশ্ব নায়ক সাজতে নানান দেশের মন্ত্রীদের সাথে সাক্ষাতের প্রচারের নয়া শৈলী তৈরিতে নেমে পড়েছে। যা আবারও প্রতারণার জন্ম দেবে।
কিন্তু, ভূমধ্যসাগরের তীরে সৃষ্ট গাজার অগণিত জীবন যোদ্ধা ও ও গ্রেটা থুর্নবার্গেদের বিশ্বমানবতার প্রতিধ্বনিকে আর কোনোভাবেই বিশ্ব মনন থেকে আড়াল করতে পারবে না বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি। মানবতার মন, মনের মানবতা মিলনের প্রশ্নে মহান মার্কসের প্রকাশিত অনুভূতি আগামীতে একসাথে আরও আরও বিস্তৃত ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে। আবারও প্রমাণিত হবে মার্কসবাদ অপ্রতিরোধ্য, বিশ্বমানবতাই বিশ্বের ভবিষ্যত। বিশ্বমানবতার এই সার্বজনীন আবেদনই উত্থাপন করে দিল, " বিশ্বমননে বিশ্বমানবতার হাত ধরে কি সাম্যবাদ সূচিত হল" ? হ্যাঁ, সিম্পটম তাই বলছে।

