রাজীব সিকদার
১৯২৪ সালে গান্ধীজি নিজে হিন্দুস্থান টাইমস উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে এটা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে পরিনত হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই এই পত্রিকার স্বত্ব কিনে নেন জি ডি বিড়লা (গান্ধীজি তাঁকে পুত্র মনে করতেন)। ১৯৩৭ -১৯৫৯ সাল পর্যন্ত গান্ধীজির কনিষ্ঠ পুত্র দেবদাস গান্ধী এই পত্রিকার সম্পাদক হন। গান্ধীজি কোথায় যাবে, কি করবে, কি খাবে, কি বানী দেবে, শ্রীকৃষ্ণ হবে না রঘুপতি হবে, নাকি রাম হবে সবই আগের থেকে প্রচারের প্লট তৈরি হত। মাঝে মধ্যে বিপুল অংকের টাকা গান্ধীজিকে নানান উদ্দেশ্যে পাঠাতেন। ঘনশ্যাম দাস বিড়লার 'বাপু ' কিম্বা ' গান্ধীর ছায়ায় ঘনশ্যাম দাস : স্মৃতি কথা ' তার বইতে এই সব কথা পাবেন। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাস খুঁজলে কিম্বা হিন্দুস্থান টাইমসের ইতিহাস খুঁজলে গান্ধীজি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পাবেন। যা আপোষহীন ধারার বিপ্লবীদের সম্পুর্ণ বিপরীত।
তবে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে গান্ধীর জনপ্রিয়তা ও অর্থনীতি সংক্রান্ত এই নেপথ্য সংবাদ পূর্ব ভারতের বিপ্লবীদের খুঁটিয়ে জানা তেমন সম্ভব ছিল না। এমনকী সুভাষ বোস , রবীন্দ্রনাথও তেমন ভাবে জানলে গান্ধীজিকে 'জাতির জনক' বলতো কিনা সন্দেহ ছিল। তবে, গান্ধীর এই সব বৃত্তান্ত জেনে বিজেপির কিম্বা আরএসএস এর হৈ হৈ করার কিছু নেই। কেননা জি ডি বিড়লা, গান্ধী, প্যাটেল, নেহেরু সকলেই দৃষ্টিভঙ্গীতে সহমত ছিলেন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাঁর 'মন কি বাত' অনুষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জ পর্যন্ত যে বাপুজীর গুণকীর্ত্তন করতে করতে নিজেকে জাতীয় - আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এজেন্ট হিসাবে তৈরি করেছেন এবং ভারতের কোটি কোটি শোষিত - নিপীড়িত মানুষের সর্বনাশ করে চলেছেন এই সব কৌশলই গান্ধীজির দেখানো পথ ছাড়া কিছুই নয়। যা কোনোভাবেই বর্তমান ভারতীয় নাগরিকদের সুস্থ সবল আর্থসামাজিক - রাজনৈতিক - সংস্কৃতির পক্ষে যেতে পারে না।

