পিয়া রায়
ইতালিতে দুর্গাপুজো একটি ভিন্ন আবহে অনুষ্ঠিত হলেও এর ভক্তিমূলক আবেদন এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব কোনও অংশে কম নয়। ইউরোপের এই দেশটি মূলত খ্রিস্টধর্মপ্রধান হলেও এখানে বসবাসরত বাঙালি, ভারতীয় ও দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্গোৎসব বিশেষ উৎসাহে পালিত হয়। বিশেষ করে রোম, মিলান, ফ্লোরেন্স, ভেনিস এবং নেপলসের মতো বড় শহরগুলোতে বসবাসরত ভারতীয় প্রবাসী সমাজ দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে একত্রিত হয়। তাদের কাছে এই উৎসব শুধু দেবী দুর্গার আরাধনা নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রবাসে থেকে আপনজনের সঙ্গে আবেগ ভাগ করে নেওয়ার এক মহামঞ্চ।
ইতালির দুর্গাপুজো সাধারণত ভারতীয় দূতাবাস বা স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সহায়তায় আয়োজিত হয়। অস্থায়ী প্যান্ডেল বা ভাড়া করা অডিটরিয়ামে পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতিমা সবসময় মাটির তৈরি হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই দেবীর প্রতিকৃতি বা ফাইবারগ্লাসের মূর্তি ব্যবহার করা হয় যা বছর বছর পুনঃব্যবহারযোগ্য। তবুও আচার-বিধি ও পূজার মূল কাঠামোতে কোনও ছেদ ঘটে না। ভক্তরা সকাল থেকে স্নান করে উপবাসে পূজা শুরু করেন এবং সন্ধ্যায় আরতি, ধুনুচি নাচ, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনিতে ভরে ওঠে মিলনমেলা।
প্রবাসী বাঙালিদের কাছে ইতালির দুর্গাপুজো মূলত এক বহুসাংস্কৃতিক উৎসবে রূপ নেয়। ইতালীয় বন্ধু-বান্ধব কিংবা অন্যান্য ইউরোপীয় নাগরিকরাও এই উৎসবে যোগ দেন এবং ভারতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে কাছ থেকে উপভোগ করেন। বিশেষত ভোগ ও প্রাসাদের আয়োজন ইতালীয়দের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। খিচুড়ি, লাবড়া, বেগুনি, চাটনি, পায়েসের মতো ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হয়, যা বিদেশের মাটিতে এক টুকরো বাংলার স্বাদ এনে দেয়।
এই উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বগুলোও সমান জনপ্রিয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত, আধুনিক গান, নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি থেকে শুরু করে ফ্যাশন শো—সবই আয়োজন করা হয়। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রবাসী প্রবীণরাও এখানে অংশ নেন। এর ফলে ইতালির দুর্গোৎসব শুধুমাত্র ধর্মীয় পূজা নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
ইতালির দুর্গাপুজো মূলত প্রবাসী জীবনের এক অভিন্ন প্রতিচ্ছবি, যেখানে ধর্মীয় ভক্তি, সামাজিক বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক চর্চা একসঙ্গে মিশে যায়। মাতৃভূমি থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেও বাঙালি হৃদয় দেবী দুর্গার আরাধনায় এক হয়ে যায়। তাই ইতালিতে দুর্গোৎসব মানে কেবলমাত্র পূজা নয়, বরং প্রবাসের কঠিন বাস্তবতার মধ্যে সাময়িকভাবে আপনজনের সঙ্গে মিশে যাওয়া, ঐতিহ্যের শেকড় আঁকড়ে ধরা এবং আনন্দের সাগরে ডুবে থাকা।
ছবি: সংগৃহীত

