নরেন্দ্রনাথ কুলে
আজকের সমাজ নীতিবোধের সংকটে জর্জরিত কি ? এ প্রশ্নের উত্তরে ভিন্ন মত থাকাটাই স্বাভাবিক। কেউ বলবে আংশিক, কেউ বলবে অধিকাংশই, কেউ আবার এভাবে বলবে যে কিছুটা অন্তত ভালো আছে বলেই সমাজটা চলছে । ঠিকই সমাজটা চলছে । রাজনৈতিক ভাবে চলছে । কিন্তু কোন রাজনীতিতে- তার উত্তরে অবশ্যই দলীয় রাজনীতির কথা উঠবে । সমাজে নীতিবোধের সংকট এই উত্তরে লুকিয়ে থাকে । আজ সমাজের বাতাস রাজনীতি ব্যতীত চলতেই পারে না । সেই রাজনীতির চরিত্র যদি সংকট তৈরি করে, তাহলে সমাজ সংকটেই নিমজ্জিত হবে । আর এই রাজনীতির চরিত্রে যে সকল নেতৃবৃন্দ দেখা যায়, তাঁদের চরিত্র প্রশ্নাতীত এ কথা বলা যায় কি ? আজকের নেতৃবৃন্দের চরিত্র প্রসঙ্গে বলতে গেলে বিজেপির প্রবীণ নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়করী'র সম্প্রতি এক মন্তব্যে তার একাংশ পরিষ্কার হতে পারে । তিনি বলেছেন, ..'যে ক্ষেত্রে আমি কাজ করি, সত্য বলা সেখানে বারণ । সব থেকে বেশি মানুষকে যে মূর্খ বানাতে পারে, রাজনীতিতে তিনিই সব থেকে বড় মাপের নেতা হন ।' গড়করীজী তাঁর রাজনৈতিক জীবনের উপলব্ধি থেকে বুঝতে পেরেছেন । সেই উপলব্ধি থেকে তাঁর ভাবনার উত্তরণের এমন বহিঃপ্রকাশ অনেক কথাই বলে দিয়েছে । তাঁর মন্তব্যের চরিত্র রাজনীতিতে আজকে বিরল চরিত্র বলা যাবে কি ? এই চরিত্রই তাঁর দলীয় রাজনীতির চরিত্রকে প্রকাশ করে । তাহলে সততার নিদর্শন রাজনীতির পরিবেশে ফুটে উঠবে তা কি হতে পারে ? রাজনীতিতে চলার পথ কি সততার পথ চলতে ব্যর্থ? এই পথ ব্যর্থ হলে নেতৃত্বের সততা বজায় রাখা ব্যর্থ বলা যাবে কি ?
এই পরিবেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরিত্র আজকে যা দেখা যাচ্ছে তা কি তাঁদের দলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় নাকি শুধুই ব্যক্তিগত ? নেতৃত্বের ব্যক্তিগত চরিত্রও সমাজে প্রভাব ফেলে । যে চরিত্র নেতাজি, চিত্তরঞ্জন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এই সমাজকে দেখিয়েছেন, আজকে তা দেখা যাচ্ছে না কেন ? সমাজ পাল্টে গেছে বলে কি ? কিংবা রাজনীতি পাল্টে গেছে বলে কি ? দুর্নীতিগ্রস্থ, চরিত্রহীন এবং মিথ্যাবাদী এই তিন শব্দ থেকে আজকের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বাদ দেওয়া যাবে কি ? প্রথম শব্দ দুটি যে নেতৃত্বের সাথে জড়িয়ে থাকে, তাঁদের প্রথমে চেনা না গেলেও পরে কোন না কোনভাবে পরিষ্কার হয়ে যায় । কিন্তু তৃতীয় শব্দটি যাঁর সাথে জড়িয়ে থাকে সমাজের পক্ষে সে নেতৃত্ব সত্যি ক্ষতিকর । আর যে নেতৃত্ব সত্য ও মিথ্যার মিশ্রণ ঘটাতে পটু তা সমাজের পক্ষে অত্যন্ত ভয়ংকর । আজকের রাজনীতি ও তার নেতৃবৃন্দের অধিকাংশই এই পথে চলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে, যা শুধু সমাজের কাছে শুধু ভয়ঙ্কর নয়, ধ্বংসাত্মকও বটে । এই ধ্বংসাত্মক পথেই মানুষকে হাঁটতে হবে, নাকি এই পরিস্থিতির গোলোকধাঁধা থেকে মানুষ ও সমাজের উদ্ধারকারীকে দেখা যাবে ?