সুজয় দাস
চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায় বাংলা তথা ভারতের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক মিথ। পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী। অনেকেই তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের রূপকার বলেন। ওনার সময়ে বাংলায় বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল স্থাপন হয়।স্বনামধন্য চিকিৎসক হিসেবে বিধানচন্দ্র রায়ের প্রতি সমালোচনা অতি বড়ো পন্ডিতেরও অসাধ্য। প্রতি বছর ওনার জন্ম ও মৃত্যু দিনে ডক্টরস্ ডে হিসেবে শ্রদ্ধার সাথে পালন করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক বিধান রায়! সর্বোপরি মানুষ বিধান রায়!
এদেশে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে ১লা সেপ্টেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ন দিন। বুভুক্ষু মানুষের জন্য খাদ্যের দাবিতে, গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে গণআন্দোলনের উপরে পুলিশি নিপীড়ন নামিয়ে আনা হলে ছাত্রসমাজ তার বিরুদ্ধে নামে – সারা পৃথিবীতেই এই ঘটনা ঘটে, আমাদের দেশেও লড়াই সংগ্রামের সেই ধারাতেই ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। "খাদ্য চাই খাদ্য দাও, নইলে গদি ছেড়ে দাও" ,এমনই স্লোগানের দিতে দিতে বিশাল জমায়েত হয়েছিল তৎকালীন অক্টোরলোনি মনুমেন্টের (অধুনা শহীদ মিনার) পাদদেশে।১৯৫৯ সালে ৩১শে আগস্ট বাংলার বিভিন্ন জেলার জনসাধারণ মিলিত বিক্ষোভ প্রদর্শন ছিল খাদ্যের দাবীতে। উদ্দেশ্য মহাকরণ অভিযান। দুপুর গড়িয়ে প্রায় ৩.৩০ নাগাদ অভিযান শুরু হলে মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়ের পুলিশ ব্যারিকেড কর মিছিল আটকায়। মিছিলে তখন লক্ষাধিক মানুষের মিছিল শুরু হবার ঘন্টা দুই পর প্রায় সন্ধ্যার শুরুতে হঠাৎ লাঠিচার্জ এবং টিয়ার গ্যাস সেলিং শুরু করে পুলিশ। অতিরিক্ত টিয়ার গ্যাস সেটিংয়ে চারিদিকে অন্ধকার,তার উপর বীভৎস লাঠিচার্জ চলতে থাকে। লাঠির আঘাতে অনেকেরই হাত-পা ভেঙ্গে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।অসংখ্য মানুষ আহত হয় ,প্রায় ৮০জন নিহত। পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ।
এরই প্রতিবাদে ১লা সেপ্টেম্বর বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন ঐক্যবদ্ধ ছাত্র ধর্মঘট ও ছাত্র সমাবেশের আহ্বান দেয়। অসংখ্য ছাত্রদের মিছিল ধর্মতলার দিকে এগোতে।ধর্মতলা স্ট্রীটের (লেনিন সরণী)কাছে ওয়েলিংটন স্কোয়ারে (সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার) বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশের বাধা টপকে প্রতিবাদী ছাত্ররা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের বাড়ির কাছে পৌঁছালে মিছিলের উপর টিয়ার গ্যাসের সেলিং এবং বেপরোয়া গুলি চালায় পুলিশ। গুলির আঘাতে শহীদ হয় আটজন ছাত্র। বহু জন সারাজীবনের মতো পঙ্গুও হয়ে গেছে। আগের দিন ৩১শে অগাস্ট খাদ্যের দাবীতে জনগণকে লাঠিপেটা করে এবং পরের দিন ১লা সেপ্টেম্বর সেই নারকিয় ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালিয়ে বিধান রায় সরকারের পুলিশ নারকীয় হত্যালীলা চালায়।
এমনকি নেতাজী সুভাষচন্দ্র ও কংগ্রেসের দ্বন্দ্বে বিধানচন্দ্র রায়ের ভূমিকা খুব একটা পজিটিভ ছিলোনা।
রাতের অন্ধকারে আমরা চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়।সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশের একটি অঙ্গ রাজ্যের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হয়তো বেশ কিছু জন মোহিনী উদ্যোগ বিধানচন্দ্র রায় নিয়েছিলেন। কিন্তু চাঁদের গায়ে যেমন কলঙ্ক থাকে, তেমন ভাবেই ৫৯সালের খাদ্য আন্দোলন ও ছাত্র আন্দোলনে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ভূমিকা ও আচরণ , তাঁর জীবনে কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসের পাতায় রয়ে যাবে।আজ ঐতিহাসিক ছাত্র শহীদ দিবসে ছাত্র আন্দোলনের সকল শহীদদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধার্ঘ্য।